‘বহিষ্কার নয়, সমঝোতায় সমাধান চাই’

প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মীদের হুমকি দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বহিস্কার না করে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান চান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2014, 01:51 PM
Updated : 23 August 2014, 02:16 PM

শনিবার উপাচার্য আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নগরীর এস এস খালেদ সড়কের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ চবিতে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের নিরাপত্তার দাবি জানান।

আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিনিধিদের নানা সময়ে হুমকি দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের তালা লাগিয়ে দেয়া এবং এসব ক্ষেত্রে চবি কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা পালনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন সাংবাদিক নেতারা।

এসব অভিযোগের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, বিভিন্ন সংবাদ হয়। কিছু সংবাদ কখনো কখনো আমারো মনঃপূত হয় না ।

“অনেক ছাত্র সংগঠন আছে। তাদেরও মনঃপূত হয় না। বর্তমানে আমাদের ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয়ও আছে। সেটা তো স্বীকার করতেই হবে।“

উপাচার্য বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ছাত্র সংগঠনের কেউ হয়তো ফোন করে সংবাদকর্মীকে বলে- দেখে নেব । এটা ঠিক না।

“আমার কাছে আসলে বলি- তোমরা তো বন্ধু। মিটমাটও হয়ে যায়। বাইরে থেকে মনে হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড বৈরী সম্পর্ক। আসলে তা নয়।”  ‍

উপাচার্য বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য আছে। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝিও আছে। আমিও কাজ করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হই। তেমন সাংবাদিকরাও বাধার মুখোমুখি হয়।

“তবে এসব ঘটনায় কাউকে সরাসরি পুলিশের হাতে তুলে দেয়া, এরকম কখনো হয়নি। দুর্নীতি বা অন্য কারণে বহিস্কার করি। আবার কখনো হুমকির জন্য বহিষ্কার করলেও অন্য কারণে পরে তা প্রত্যাহার করতে হয়। তাই সবসময় পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে সমাধান চেয়েছি।”

গত বুধবার চবি ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এলাকায় কর্তব্যরত হাটহাজারী থানার চার পুলিশ সদস্যর ওপর হামলা চালায় চবি শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য।

এ ঘটনায় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় পরদিন বৃহস্পতিবার চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাসনিম হাসানকে ফোনে হুমকি দেয় হামলাকারীরা।

এ হুমকির ঘটনায় অবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে চবি সাংবাদিক সমিতি।

শনিবারের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বিষয়টির অবতারণা করে বলেন, চবি’র ‍সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে।

“একজনকে হুমকি দেয়া হয়েছে। আগেও সমিতির কার্যালয়ে তালা দেয়া হয়েছে। প্রশাসন নিরব থাকে। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এরপর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরীও একই দাবি জানান।

পরে বক্তব্য দিতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, আমার কোনো প্রতিপক্ষ নেই। কিন্তু কখনো কখনো মনে হয় তারা (চবি প্রতিনিধি) যেন পক্ষ-বিপক্ষের লোক।

“পদাধিকার বলে আমি চবি সাংবাদিক সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। চবি প্রশাসনের পক্ষে প্রতি বছর সমিতিতে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদানও দিয়ে ‍থাকি। জিজ্ঞেস করলে তারা বলে- অফিস থেকে নেতিবাচক সংবাদ করতে বলেছে। অবশ্য এটা আমি বিশ্বাস করি না।”

উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সাংবাদিকতা করেন তারা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে সাংবাদিক।

“চবিতে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সেটা দৃশ্যমান নয়। আপনাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার দায়িত্বও আপনাদের।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি’র উপ-উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শামসুল হক হায়দরী প্রমুখ।