দুর্ভোগে গাইবান্ধার পানিবন্দি মানুষ

গাইবান্ধায় ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2014, 01:01 PM
Updated : 23 August 2014, 01:01 PM

শনিবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলায় বন্যাকবলিত ২৫ হাজার পরিবারের দুর্ভোগ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত পানিবন্দি মানুষ খাদ্য, বাসস্থান ও গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে।

নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। পানি ওঠায় জেলার ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়া গত পাঁচ দিন ধরে গাইবান্ধার বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত নৌরুটে রেলওয়ে ওয়াগান পারাপার বন্ধ রয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘাঘট নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদ সীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেন্টিমিটার কমেছে, করতোয়ার পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং তিস্তার পানি অপরিবর্তিত আছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আমিরুল ইসলাম জানান, জেলার বন্যা কবলিত ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। তার মধ্যে ১৬টিতে পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলা দশটি, সাঘাটায় একটি ও সুন্দরগঞ্জে পাঁচটি।

এছাড়া ফুলছড়িতে তিনটি ও সাঘাটায় একটি হাইস্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট মেরিন বিভাগের সারেং আবু জাকের জানান, এখনো ব্রহ্মপুত্রের পানি না কমায় প্রবল স্রোতের কারণে ওয়াগানবাহী টাগ (ফেরি) বালাসিঘাটে স্থাপিত পন্টুনের কাছে ভিড়তে পারছে না।

এ কারণে গত মঙ্গলবার রাত থেকে রেলওয়ের মেরিন বিভাগ গাইবান্ধার বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত নৌরুটে রেলওয়ে ওয়াগান পারাপার বন্ধ করে দেয়।

ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় মালামাল পরিবহন বন্ধ রয়েছে বলে জানান জাকের।

ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোতোষ রায় জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।

সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে তাদের (বন্যার্ত মানুষ) চাহিদার অর্ধেকও মিটছে না বলে জানান তিনি।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজনু মিয়া জানান, বন্যা কবলিত তিন হাজার পরিবারের মধ্যে এখন পর্যন্ত  মাত্র সাড়ে চারশ পরিবার ত্রাণ পেয়েছে।

একই উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম জানান, বন্যার্ত মানুষগুলো গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। নলকূপগুলো ডুবে যাওয়ায় তার এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. এহছানে এলাহী জানান, জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে আরও ২শ মেট্রিক টন চাল ও তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ জানান, উপজেলার বেলকা ইউনিয়নে পূর্ব বেলকা ও বেকরির চরে (মধ্য বেলকায়) সরকারিভাবে দুইটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাতে দুইশ বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।