বন্যা কবলিতদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণ

কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে জুটছে না ত্রাণের চাল।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিআহসান হাবিব নীলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2014, 11:07 AM
Updated : 23 August 2014, 11:07 AM

ত্রাণের আশায় জন প্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছে  বানভাসি মানুষেরা।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ বিভাগের কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান জানান, জেলার ৫৩টি ইউনিয়নের ৩৫৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত। ২৩৬টি গ্রাম ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯২ জন। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৩১১টি পরিবার।

গত সাত দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় পরিবারের সদস্যদের ছাড়াও গবাদি পশু নিয়েও দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ বলেন, বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য সরকার  এ পর্যন্ত তিনশ মেট্রিক টন চাল ও চার লাখ টাকা বরাদ্ধ  দিয়েছে। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৮৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ দুই লাখ ১৩ হাজার টাকা।

এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে আরো দুইশ’ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম ঝুনকার চরের কুলসুম (৩৭), রহিমা (৪০) ও মেহেরজান (৩৮) জানান, চরের ২২৭টি পরিবার গত ৭ দিন ধরে এক বুক পানির মধ্যে চৌকি, মাচা ও নৌকার উপর পুরো পরিবার নিয়ে দিন-রাত কাটাচ্ছে। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় খাদ্য সংকটে অনাহারে থাকতে হচ্ছে দিনমজুর পরিবারগুলোকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যায় রান্না করতে অসুবিধা হওয়ায় যাদের সামর্থ আছে তারা একদিন রান্না করে তিন দিন ধরে খাচ্ছে। গ্রামের নলকূপগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি মানুষ নদ নদীর পানি পান করছে। চরম খাদ্য কষ্টে পড়েছে পানিবন্দি পিপুলবাড়ি, আরাজি পিপুলবাড়ি. রলাকাটা, বড়–রা, আইরমারী, অস্টআশির চর, কালির আলগা, পোড়ার চর, দৈ-খাওয়া, চর পার্বতীপুরসহ একাধিক চরের মানুষ। এসব এলাকায় মানুষের সঙ্গে গবাদি পশুরও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাফনার চরের বৃদ্ধা ময়মনা (৬৬) বলেন, “বাপজান, দিনরাত পানিত আটকা পড়ি রইছি। ছেলেবউ-পোলাপান লইয়া বেশির ভাগ সময় উপাস থাকতে হইছে।”

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য এরশাদুল বলেন, “আমার এলাকার চর পার্বতীপুর, খাসের চর, ফারাজিপাড়ায় ৫৮০ পরিবার বন্যা কবলিত। এর মধ্যে পার্বতীপুর এলাকার ৯৮ পরিবার নদী ভাঙনে বাড়ি-ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।”

৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আনোয়ার বলেন, “সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল। ভাগে ২২টি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দিতে গিয়ে লোকজনের রোষানলে পড়েছি। প্রতিদিন গরীব মানুষগুলো ছুটে আসে বাড়িতে ত্রাণের আশায়।”

খাসের চরের পাগলা, ছকিয়ত, আমিন, হাবলা জানান, সাত দিন ধরে পানিবন্দি জীবন কাটাছে। নৌকা ভাড়ার টাকা নেই। সন্তানদের নিয়ে চরম খাদ্য কষ্টে দিন কাটছে। ঘরে এখন এক বুক পানি। ঘরে যে খাবার ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। এখন কোথাও কাজ পাওয়া যায় না। তাই সন্তানদের নিয়ে চরম খাদ্য কষ্টে রয়েছেন তারা।

রহমতপুর গ্রামের আব্দুল হক, নওশাদ, বছির উদ্দিন, আব্দুল হামিদ ও এছাহাক জানান, এনজিও’র লোকজন গত তিনদিনে ৩৮টি পানিবন্দি পরিবারকে এই গ্রামের উঁচু বাড়ির মালিক গোলভানু, গোলজার, মাহবুর, মোন্নাফ, মেহেরজামাল, বেলাল, আমিনুল, মাহালম ও জাহেদুলের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। তবে কেউ খাবার বা ত্রাণ নিয়ে আসেনি।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, “ভাইরে খুব চাপের মধ্যে আছি। গরিব ও ভুখা মানুষের জন্য কোথাও বেরুতে পারছি না। লোকজনকে এড়িয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বাড়ি, বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ যেখানে যাই সেখানেই মানুষ ত্রাণের জন্য ঘেরাও করে।

“বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার হাজার পরিবার। অথচ ত্রাণ পেয়েছি মাত্র চারশ’ পরিবারের জন্য।”

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রতীপ কুমার মন্ডল জানান, বন্যায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ফলে আমন-সব্জিসহ ডাল জাতীয় ফসলের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা।

পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ বন্যা দুর্গত এলাকায় ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধরলা নদীর পানি স্থিতাবস্থায় রয়েছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমর নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।