বন্যা: কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে আড়াই লাখ পানিবন্দি

বন্যায় নতুন এলাকা প্লাবিত না হলেও কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

জামালপুর প্রতিনিধিকুড়িগ্রাম ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2014, 01:21 PM
Updated : 22 August 2014, 01:21 PM

কুড়িগ্রামে শুক্রবার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জামালপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া জেলায় নয় হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল পানির নীচে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

ধরলা নদীর ফেরিঘাট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমর নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত দেড়লাখ মানুষ পানিবন্দি বলে জানান এই প্রকৌশলী।

আবু তাহের আরো জানান, চলতি বন্যায় রাজারহাট উপজেলার ডাংরারহাট এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙনে ২ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিলীন হয়েছে ২৫ বাড়ি। একই এলাকার ৬ নং স্পারে ফাটল ধরেছে। ঠুঁটাপাইকর এলাকায় বাঁধের ১৭৫ মিটার স্লোপ ভেঙে গেছে।

এছাড়াও ভাঙনের মুখে পড়েছে ঠুঁটাপাইকর আশ্রায়ন প্রকল্প, তৈয়ব খাঁ বাজার, দলদলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

অপরদিকে সদর উপজেলার যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, পাঁচগাছি, মোগলবাসা, ভোগডাঙ্গা ও হলোখানা ইউনিয়নে নদী ভাঙনে এ পর্যন্ত ৯২০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। ভেঙে গেছে ৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা।

সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমেদ জানান, পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় ধরলা, দুধকুমর, গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে অবস্থিত ছোট ছোট চর ও দ্বীপচরে বসবাসরত লোকজন পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মাস্টার জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বহু রাস্তা ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদ্রাসায় পানি উঠেছে। 

এছাড়া নয় হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল এখনো পানির নীচে রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে এখনো বিপদ সীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ইসলামপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল জানান, ইসলামপুরের কুলকান্দি, সাপধরি, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা, চিনাডুলি, পার্থশী ও ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদ্রাসা ডুবে গেছে। পানিবন্দি লোকজন বিভিন্ন বাঁধ ও ঊঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সরকারি ত্রাণ তৎপরতা আরো বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।

মাদারগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলাল জানান, উপজেলার চর পাকেরদহ, আদারভিটা, জোড়খালী, বালিজুড়ি, সিধুলি ও কড়ইচূড়া ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

সরিষাবাড়ি পিংনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় জানান, তার ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

মেলান্দহের ঝাউগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিল্লোল সরকার জানান, তার ইউনিয়নের অন্তত ৮/১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ আজাদ জানান, জেলায় বন্যায় ৯ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমির রোপা-আমন, আউশ, বীজতলা, সবজি, আখ ও মরিচের ক্ষেত ডুবে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ আজাদ জানান, জেলায় ৯ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমির রোপা-আমন, আউশ, বীজতলা, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে আছে।