তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, নিয়ম মেনেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার সর্বোচ্চ পরিষদের এই নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীনও বলেছেন, মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে কোনো তাড়াহুড়ো হয়নি।
আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের ৬টি পদে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে গত মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ফিন্যান্স কমিটির একজন প্রতিনিধি এবং একাডেমিক কাউন্সিলের ছয় প্রতিনিধি পদেও নির্বাচন হবে।
সব মিলিয়ে ১৩টি পদে প্রার্থী হতে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন আগামী রোববার। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার পর কার্যদিবস পাওয়া যাচ্ছে মোট চারটি।
এই তফসিল ঘোষণাকে ‘আকস্মিক ও অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের জোট সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক সদরুল আমিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরশু রাতে নির্বাচনের কথা শুনেছি। এরপর মাত্র দু’দিন ওয়ার্কিং ডে পেলাম, রোববারে মনোনয়ন জমা দিতে হবে।
“এটা খুবই আন-ইউজুয়াল। অতীতে কখনো এরকম হয়নি। এটা কেন হল?”
সময় স্বল্পতার কারণে প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্যানেল ঘোষণাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সাবেক সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি সদরুল আমিন।
“এ নির্বাচনের কোনো ইন্ডিকেশনও ছিল না। আমরা মনে করেছি, ডিন নির্বাচনের (তিন মাস) পর সিন্ডিকেট নির্বাচন হবে,” বলেন তিনি।
তার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিয়ম মেনেই মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১২ সালে সর্বশেষ নির্বাচনে নির্বাচিতদের দুই বছরের মেয়াদ গত ২১ মে শেষ হয়েছে। তারপর যে কোনো দিন ভোটের উদ্যোগে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই বলে উপাচার্যের দাবি।
“মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২২ মে থেকে যে কোনো দিন এ ভোট হতে পারে। বলছেন, ‘হঠাৎ ভোটের তারিখ দেয়া হয়েছে’ , তারা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “মে মাসের শেষে মেয়াদ শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি, রমজান ও একাডেমিক কারণেই একটু বিলম্ব হয়েছে নির্বাচন দিতে। তবে তাড়াহুড়ো বা বিলম্ব করা হয়েছে, তা বলার কোনো অবকাশ নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক এতে ভোট দেবেন।
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিন্ডিকেটে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকেন ৬ জন। ছয়টি ক্যাটাগরি- ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে সদস্যরা নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক নীল দল এবং বামপন্থি শিক্ষকদের গোলাপী দল একত্রে প্যানেল দেয়। বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সাদা দল আলাদা প্যানেল দেয়।
মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণার পর দুদিন পেরোলেও কোনো দলই এখন পর্যন্ত প্যানেল ঘোষণা করেনি।
সাদা দলের শিক্ষকদের নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপউপাচারর্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের ভোটার হওয়া জটিলতা নিরসনের আগেই নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা করেন।
“আমাদের কিছু সংখ্যক শিক্ষক বাধ্যতামূলক ছুটিতে রয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত শেষ না করায় এখনো তারা ঝুলে রয়েছে। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তারা প্রার্থী হতে পারছেন না। এ অবস্থায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে পুরোপুরি সুষ্ঠু বলা যায় না।”
এসব অভিযোগ তুললেও ভোটে অংশ নিতে প্যানেল চূড়ান্ত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সাদা দল।
ইউসুফ হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন রোববারই তারা প্যানেল ঘোষণা করবেন।
প্যানেল চূড়ান্ত করতে নীল দল শনিবার সাধারণ সভা ডেকেছে বলে জানান দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল আজিজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “সেখানে আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। পরদিনই মনোনয়ন জমা দেয়া হবে।”
আগের মতো এবারও নীল ও গোলাপী দল মিলেই একত্রে প্যানেল দেবে বলে জানান অধ্যাপক আজিজ।