২১ অগাস্ট মামলা: ৫ বছরে ২০ ভাগের সাক্ষ্যগ্রহণ

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় পাঁচ বছরে মাত্র এক পঞ্চমাংশ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2014, 07:32 PM
Updated : 13 Nov 2014, 11:56 AM

বিচারে দেরির জন্য আসামি পক্ষের সময়ক্ষেপণকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান দায়ী করলেও রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে সাক্ষী হাজির করতে ব্যথর্তার নজিরও দৃশ্যমাণ ছিল।

সৈয়দ রেজাউর রহমানসহ ১১ জন আইনজীবীকে গ্রেনেড হামলার দুই মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলেও তাদের অধিকাংশকেই গড়হাজিরই দেখা যায় শুনানির দিনগুলোতে।

তবে আগামী বছরের ২১ অগাস্টের আগেই রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী রেজাউর রহমান। এজন্য ‘অপ্রয়োজনীয়’ সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন না করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

গ্রেনেড হামলার দশম বছর পূর্তির আগের দিন বুধবার মামলার অগ্রগতি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় রেজাউর রহমানের।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন ২৪ জন। হামলায় আহত হন ৫ শতাধিক, যাদের অনেকের বিভিন্ন অঙ্গহানি হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এই ঘটনার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে দায়িত্ব পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ৯ জুন ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর।

এরপর বিচার শুরু হয়, সাক্ষ্যগ্রহণ হয় ৬১ জনের। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন দ্রুতবিচার আদালতের তৎকালীন বিচারক মাসদার হোসেন।

অধিকতর তদন্ত শেষে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও আলী আহসান মো. মুজাহিদসহ আরো ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দ।

২০১১ সালে তিনি অভিযোগপত্র দেয়ার পর নতুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলা দুটির বিচারেও গতি আসে প্রথমে।কিন্তু ধীরে ধীরে গতি কমে আসে মামলায়।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মোট ৪৯১ জন। এর মধ্যে বুধবার সাক্ষ্য দিয়েছেন সিআইডির তৎকালীনপরিদর্শক খন্দকার মিজানুর রহমান। তিনি মামলার ৯৯তম সাক্ষী।

নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে নাজিমউদ্দিন রোডে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিশেষ এজলাস বসিয়ে এই দুই মামলার বিচার একসঙ্গে চলছে।

ওই এজলাসে বসে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন সাক্ষী মিজানুরের সাক্ষ্য নিয়ে আগামী ২৪ এবং ২৬ অগাস্ট তাকে আসামি পক্ষে থেকে জেরার জন্য দিন ঠিক রেখেছেন।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সপ্তাহে দুই দিন করে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পড়ে।

বিচার শুরু হলেও আসামি পক্ষের কারণে তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে রেজাউর রহমানের অভিযোগ।

তিনি বলেন, “বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা রায় বিলম্বিত করতে সাক্ষীদের অপ্রাসঙ্গিক জেরা করছেন। তাছাড়া বিচারকাজ চলাকালীন তারা অপ্রয়োজনীয় সাজেশনও দিচ্ছেন।”

আসামিদের মধ্যে অনেকে আরো মামলায় জড়িত থাকায় তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়ার প্রয়োজন হওয়ায়ও শুনানি পেছাতে হচ্ছে বলে জানান রেজাউর রহমান।

অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মামলা দুটির তদন্ত ও বিচারে যেদিন ‘রাজনীতি’ ঢুকল, তখন থেকেই বিচারে বিলম্ব শুরু হল।

রেজাউর রহমান অবশ্য বলছেন, “আগামী বছরের ২১ অগাস্টের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। সেজন্য ৪৯১ জনের মধ্যে অবশিষ্ট অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য আর আদালতে উপস্থাপন করব না।”

তবে গত কিছু দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনার জন্য ১১ জনকে দায়িত্ব দেয়া হলেও রেজাউর রহমান ছাড়া আর কেউ নিয়মিত হাজির হন না।

এদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত কতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে, তাও বলতে পারেননি তারা।

২০০৮ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং থেকে চাঞ্চল্যকর এই মামলা পরিচালনার জন্য ১১ জন আইনজীবীর তালিকা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এসেছিল।

এদের মধ্যে দুজন সাহারা খাতুন ও কামরুল ইসলাম পরে মন্ত্রী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মামলায় অংশ নিতে পারেননি তারা। তবে সাহারা খাতুন বর্তমান মন্ত্রিসভায় নেই।

এই ১১ জনের মধ্যে একজন শামসুদ্দিন নীলু মারা গেছেন। আইন পেশায় সক্রিয় অন্যরা হলেন- কাজী সাজাওয়ার হোসেন, খন্দকার আব্দুল মান্নান, কাজী নজীব উল্ল্যাহ হীরু, মো. আলী হোসেন, আবদুল্লাহ আবু, মোকলেসুর রহমান বাদল, আব্দুর রহমান হাওলাদার, সানজিদা খানম, আবদুস সাত্তার দুলাল ও ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী।

এদের মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাজ করছেন আবার কেউ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

সৈয়দ রেজাউর রহমানের সঙ্গে শুধু দেখা যায় ওই আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূইয়াকে। রেজাউর রহমানের সহকারী আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ, আকরাম উদ্দিন শ্যামল ও সেলিম হোসেনকেও সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

এই মামলায় মোট ৫২ আসামিদের মধ্যে ১৯ জনই পলাতক। তাদের পক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত রয়েছেন ১৫ আইনজীবী।

এদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া অন্য পলাতকদের আইনজীবীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জেরা না করে আসামি পক্ষের অন্য আইনজীবীর জেরাকেই নিজের জেরা বলে স্বীকৃতি দিতে দেখা গেছে।