২১ অগাস্ট হামলার ১৯ আসামিই পলাতক

গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৯ জনই পলাতক।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2014, 06:07 PM
Updated : 25 August 2014, 04:41 AM

এই পলাতকদের সবাই বিদেশে রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা। তবে এর মধ্যে মাত্র একজন মাওলানা তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস রয়েছে।

অধিকতর তদন্ত শেষে ৫২ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বাকিদের গ্রেপ্তার করে দেশে আনার উদ্যোগও এখনো নেয়া হয়নি।

গ্রেনেড হামলার ১০ বছর পূর্তির আগের দিন বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেক্স ‘ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো’র (এনসিবি) দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) মাহবুবুর রহমান ভূইয়া তদন্ত সংস্থা সিআইডির দিকে আঙুল নির্দেশ করেন। 

তাজউদ্দিনের নামে রেড নোটিস রয়েছে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পলাতক অন্য আসামিদের ব্যাপারে তদন্ত সংস্থা সিআইডি চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এনসিবি।”

এরপর আলোচিত এই মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দের কাছে জানতে চাইলে তিনি  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,তারা  এখনো খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

“বাকি পলাতকরা কে, কোথায় আছে সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইন্টারপোলের রেড নোটিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

পলাতক সব আসামি বিদেশে আছেন বলে নিঃসন্দেহ কাহহার আকন্দও। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে রয়েছেন।

আর ভারতের তিহার কারাগারে দুই আসামি মুরসালিন আর মুত্তাকীন বন্দি আছেন বলে জেনেছেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যরা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই তার কাছে।

হারিছ চৌধুরী ও মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

পলাতকদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ থাইল্যান্ডে, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ ভারতে, এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে, সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবুল ওরফে রাতুল বাবু ভারতে আছেন বলে সিআইডির একটি সূত্র জানায়।

কায়কোবাদ সৌদি আরবে আছেন বলে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে। 

এছাড়া পলাতক রয়েছেন খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা জুবায়ের ওরফে দেলওয়ার, মাওলানা তাজুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান, খান সাইদ হাসান।

মোট ৫২ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২৫ জন কারাগারে রয়েছেন।

জামিনে আছেন আটজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, পুলিশের সাবেক আইজি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী।

এছাড়া জামিনে রয়েছেন মামলার প্রথম দিকের তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির দুই সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান ও আব্দুর রশীদ এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

জামিনে থাকা মামলার সাবেক তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরেকে আসামি সাজিয়ে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে হত্যাই এই হামলার লক্ষ্য ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন, আহত হন পাঁচ শতাধিক। আহতদের মধ্যে কয়েকজন পরে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান, যার মধ্যে ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফও রয়েছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ৯ জুন ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তে তারেক, বাবর, মুজাহিদসহ আরো ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন কাহহার আকন্দ।

২০১১ সালে তিনি অভিযোগপত্র দেয়ার পর নতুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। আদালতে এই পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।