উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমরসহ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2014, 02:32 PM
Updated : 20 August 2014, 03:49 PM

নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইন্ধা ও নেত্রকোনা জেলার কিছু এলাকা।

জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

জামালপুর

যমুনার পানি বেড়ে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে সাত সেন্টিমিটার বেড়ে বুধবার সকালে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ইসলামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল জানান, উপজেলার পানিবন্দি প্রায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য সরকারিভাবে দুই লাখ টাকা ও ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের রোপা-আমনের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

প্লাবিত হয়েছে সরিষাবাড়ি উপজেলা পিংনা, পোগলদীঘা, সাতপোয়া ও কামরাবাদ ইউনিয়নের নিচু এলাকা।

সিরাজগঞ্জ

যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বুধবার দুপুরে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর অন্তত ৫০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, ১৭শ হেক্টর জমির ধান, শাকসবজি ও সাড়ে তিন হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রায় ৩০০ পরিবার শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে সরকারি তথ্যে জানা গেছে। অনেক এলাকায় নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল জানান, পানি আরো ২/৩ দিন বাড়তে পারে এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সরকারিভাবে ১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সোহার্দ্য নামে একটি এনজিও ৪৫ হাজার টাকা বিতরণ করেছে।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জাকিউর রাহিম শাহেদ জানান, বন্যায় জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ৫৮ বর্গ কিলোমিটার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ২০ কেজি করে ২৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও সাহায্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।   

কুড়িগ্রাম

বুধবার জেলার বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। জেলার ৪০টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির আউশ, আমন, বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, গত ২৪ ঘন্টায়, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া ধরলা নদীর ফেরী ঘাট পয়েন্টে ৩ ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৪ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমর নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

বুধবার থেকে বন্যার্তদের মধ্যে চাল ও টাকা ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ জানান, বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো ২০০ মেট্রিক টন চাল, জিআরের ৫ লাখ টাকা এবং গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি বাবদ ১০ লাখ টাকা চেয়ে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে।

গাইবান্ধা

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার সাঘাটা উপজেলায় মুন্সিরহাট উত্তর সাথালিয়া পয়েন্টের বেড়ি বাঁধের ১০০ গজ ভেসে যাওয়ার পর বুধবার মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫০ ফুট দেবে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল মিয়া জানান, সাঘাটায় বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে সংস্কার কাজ চলছে।

তিনি আরো জানান, বুধবার গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রে ৯ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। বুধবার এ নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হুদা জানান, জেলার চার উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ৪৫ হাজার মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে ৯০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৯০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

নেত্রকোণা

খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বদরুল হাসান লিটন জানিয়েছেন, গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে ৪০টি পরিবারের বসতঘর নদী গর্ভে চলে গেছে।

ইউএনও আরো জানান, জেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে দুই মেট্রিক টন চাউল ও নগদ টাকা বরাদ্দ করেছে।

বুধবার জেলা প্রশাসক তরুণ কান্তি শিকদার ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ৫০ কেজি চাল ও এক হাজার টাকা করে বিতরণ করেন।