ব্র্যাডফোর্ডের ক্রাউন কোর্ট মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করে বলে বিবিসি ও ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, ৩০ বছর বয়সী আবদুল হানিফ অ্যাকাউন্টেন্সি পড়তে যুক্তরাজ্যে যাওয়া ওই শিক্ষার্থীকে প্রায় চার মাস যৌনদাসী হিসাবে আটকে রেখে মারধর করেন এবং জুয়ার দেনা শোধ করতে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন।
২৬ বছর বয়সী মেয়েটি ধর্ষিত হওয়ার আগে কুমারী ছিলেন বলেও আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়।
ওই বাংলাদেশি তরুণীর সঙ্গে হানিফে পরিচয় হয়। নিজেদের মধ্যে ফোন নম্বর বিনিময়ের পর তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি হয়। মেয়েটি লন্ডনে তার থাকার জায়গার সমস্যার কথা বললে হানিফ তাকে ব্র্যাডফোর্ডে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
ওই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর মেয়েটিকে কয়েকদিন হানিফের সঙ্গে তার গাড়িতেই থাকতে হয় এবং কয়েকজন বন্ধুর বাসায় তারা রাত কাটান।
এরপর মেয়েটিকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠে তার ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন হানিফ। এ মধ্য দিয়ে তাকে কার্যত বন্দি করে ফেলা হয় এবং মেয়েটিকে প্রতিদিন জোর করে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেন হানিফ। বাইরে বের হওয়ার সময় তিনি বাসায় তালা দিয়ে মেয়েটিকে আটকে রেখে যেতেন।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ওই তরুণী জানান, তাকে হানিফের জন্য রান্না করতে হতো এবং ঘর পরিষ্কার করতে হতো। খাবার হানিফের ভাল না লাগলে মারধরের শিকার হতে হতো।
ওই তরুণী আলাদতকে বলেন, জুয়ায় আসক্ত হানিফ দেনা শোধের জন্য তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করারও চেষ্টা করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় মোবাইল ফোনের চার্জারের তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন।
স্টিফেন নেইলর নামে হানিফের এক সাবেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারায় শেষ পর্যন্ত মেয়েটির মুক্তির সুযোগ হয়।
নেইলরের কাছ থেকে খবর পেয়ে হানিফের বাসার দরজা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
নেইলর আদালতকে বলেন, মেয়েটির সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করতেন হানিফ। ব্যক্তি হিসাবে তিনি ‘ভয়ঙ্কর প্রকৃতির’ এবং কাউকে বিশ্বাস করতেন না।
নির্যাতনের ভয়ঙ্কর বিবরণ তুলে ধরে ওই তরুণী আদালতকে বলেন, হানিফের কারণে তার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। তাকে বিষণ্নতা গ্রাস করেছে এবং আত্মহত্যা প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
“আমার জীবনের সবকিছু বদলে গেছে। আমি হাসতে পারি না, কোথাও যেতে পারি না।”
শুনানি শেষে মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে হানিফকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজার আদেশ দেয় আদালত।
বিচারক পিটার বেনসন সাজা ঘোষণা করে আসামির উদ্দেশে বলেন, “আপনার নির্যাতনের শিকার মেয়েটি পরিবার ছেড়ে লন্ডন শহরে এসে পায়ের নিচে মাটি খুঁজছিল। এখানে তার খুব বেশি বন্ধুও ছিল না।
“আপনি পরিকল্পিতভাবে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন, বাসা খুঁজে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ব্র্যাডফোর্ডের ওই বাসায় তুলেছেন।
“নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে আসা মেয়েটি মানসিকভাবে ছিল অনেকটাই একা। আপনি তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেছেন, রাজি না হলে মারধর করেছেন, হুমকি দিয়েছেন।
“আপনি তার ব্যাংক কার্ড কেড়ে নিয়েছেন, যাতে তার আর্থিক স্বাধীনতা না থাকে। ফোন কেড়ে নিয়ে, ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে তাকে সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। কোনো নিরোধক ব্যবহার না করে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছেন।
“এমনকি জুয়ায় হেরে টাকার জন্য আপনি তাকে বন্ধুর কাছে তুলে দিতে চেয়েছেন। জুয়ার টাকার যোগান নিশ্চিত করতে তাকে পতিতাবৃত্তিতে নামানো হুমকি দিয়েছেন। আপনার সেই হুমকিই শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে সাহস যুগিয়েছে।”
পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কনস্টেবল ব্রেট কার্টার বলেন, “আমরা আশা করি, এই রায়ে মেয়েটি খানিকটা সান্ত্বনা পাবে। দুর্বিষহ দিনগুলো ভুলতে কিছুটা সহায়তা করবে।"