শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করছে সরকার। প্রশ্ন ফাঁসকারী এবং প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও রটনা সৃষ্টিকারীদের জেল, জরিমানা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধানও এতে থাকছে।
বুধবার এ বিষয়ে সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। পাবলিক পরীক্ষায় আমরা ৩২ সেট প্রশ্ন তৈরি করব। প্রশ্ন যদি ফাঁসও হয়, তারপরও শিক্ষার্থীদের বইয়ের সবকিছু পড়তে হবে।”
বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষার জন্য চার সেট প্রশ্ন তৈরি করা হয়।
চলতি বছর এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁসের পর পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপানো, বিলি এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়াতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানান।
১৯৯২ সালের ‘দ্য পাবলিক এক্সামিনেশনস (অফেন্স) অ্যাক্ট’ অনুযায়ী বর্তমানে প্রশ্ন ফাঁসে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে চার বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
এর আগে ১৯৮০ সালের আইনে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ১০ বছরের শাস্তির বিধান থাকলেও ১৯৯২ সালে তা সংশোধন করে শাস্তি কমিয়ে আনা হয়।
মন্ত্রণালযের কর্মকর্তা বা শিক্ষামন্ত্রী আর কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা স্বীকার না করলেও ইংরেজি প্রথম পত্র, পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ ছিল।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সোচ্চার হওয়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পদার্থ বিজ্ঞানের ‘ফাঁস হওয়া’ প্রশ্নপত্র ইন্টারনেটে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, রসায়নের প্রশ্নপত্র তার হাতে রয়েছে।
সরকার ব্যবস্থা না নেয়ায় পরীক্ষা চলাকালেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি।
এবার ঢাকা বোর্ডে কয়েকটি বিষয়ে পাসের হারেও বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়, যেসব বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল।
তবে ওই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষামন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, “পাসের হার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তা আধুনিক যুগের প্রশ্ন হবে না।”
পাবলিক পরীক্ষার সময় কারো কাছে ‘বিভ্রান্তিমূলক কাগজ’ পাওয়া গেলে তিনিও শাস্তি পাবেন জানিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যারা বিভ্রান্ত করছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করবেন না।”
নাহিদ বলেন, “মোবাইল কোর্ট দুই বছর পর্যন্ত শাস্তি দিতে পারে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আমরা তাদেরও ব্যবহার করব।”
বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষার ‘সুনাম’ হওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বলেছেন যে সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হচ্ছে।”
কোচিং সেন্টার বন্ধে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করতে হবে। আস্তে আস্তে সেটা করা হবে।”
শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ সাদিক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগমও এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ১০ বোর্ডের চেয়ারম্যান; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধিরা এ সভায় অংশ নেন।