সাংবিধানিক পদধারীদের অপসারণ নিয়ে অস্পষ্টতা

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগে সমমর্যাদার সাংবিধানিক পদধারীদের অপসারণ নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2014, 05:30 PM
Updated : 19 August 2014, 05:30 PM

বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সোমবার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংশোধনী বিলটি পাস হলে ১৯৭২ সালের সংবিধানে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের অনুমোদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের যে বিধান ছিল, তাই আবার ফিরে আসবে। পাশাপাশি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের নিয়মটি বাদ পড়বে।

এই বিধান হলে বিচারপতিদের পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদ ফিরে পাবে বলে মনে করছেন বর্তমান ও সাবেক দুজন নির্বাচন কমিশনার।

একইভাবে সাংবিধানিক পদধারী সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অপসারণের বিষয়টিও সংসদের হাতে যাবে বলে মনে করছেন তাদের একজন।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক পদধারীদের অভিশংসন হয় না।

নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ পেলে আমাদেরও একইভাবে অপসারণ করা যাবে।”

আবদুল মোবারক

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ বলে বিচারপতিদের অপসারণের পদ্ধতি ইসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করেন তিনি।

এ অনুচ্ছেদের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, “সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।”

এই শর্তে বিচারপতিদের মতো নির্বাচন কমিশনারদেরও সংসদ অপসারণ করতে পারবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনও।

“বিলের সংশোধনী পাস হলে বিচারপতিদের মতো ইসিকে অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে। আগে কমিশনকে অপসারণের সুযোগ ছিল না। আগামীতে তা পারবে। আইন পাস হলে ডেফিনিটলি ইসিকে একইভাবে অপসারণ করা যাবে।”

সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগের বিরোধিতাও করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

এম সাখাওয়াত হোসেন

“বিচারপতিদের অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রয়েছে। তা বাদ দিয়ে সংসদ এ ক্ষমতা পেলে তো কোনো রক্ষাকবচ থাকবে না। বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্তে রূপ পাবে।”

তাদের দুজনের বক্তব্যের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক পদধারীদের অভিশংসন সংসদ করবে না।

“তাদের অভিশংসন করা হয় না। ‘অসদাচরণ বা অসামর্থ্য’ হলে ওই সদস্যকে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে বলবেন।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, বাহাত্তরের সংবিধানের এই বিধান দিয়ে বর্তমান সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপিত করা হবে। 

১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়- প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।

৯৬ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় বলা ছিল- এই অনুচ্ছেদের ২ দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে।

আর ৯৬ অনুচ্ছেদের ৪ দফায় বলা হয়, কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।

আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী বলছেন, ৯৬ অনুচ্ছেদের ‘অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের’ বিষয়টি শুধু বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

“এ দুটো কারণ ছাড়া বিচারকদের অপসারণ করা হবে না বললেও সাংবিধানিক পদধারীদের কিভাবে অপসারণ করা যাবে তা বলা নেই। তারপরও এ দুটো কারণ তাদের কারো বিরুদ্ধে এলে তখন রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে বলবেন।”

আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত বিল পাসের পর তিন মাসের মধ্যে কোন পদ্ধতিতে একজন বিচারককে অপসারণ করা যাবে তার বিশদ ব্যাখ্যাসহ একটি আইন করা হবে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন।

তবে সেখানে বিচারপতিদের সমমর্যাদার পদধারী নির্বাচন কমিশন, পিএসসি ও সিএজিকে অপসারণের বিষয় তোলা হবে না বলে জানান তিনি।

“সাংবিধানিক পদধারীদের অভিশংসন প্রক্রিয়া সংসদে উত্থাপন করা হবে না। রাষ্ট্রপতি তাদের সরিয়ে দেবেন। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই,” বলেন মন্ত্রী।