মাঝ আকাশে অল্পের জন্য রক্ষা

মাস্কট থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে মাঝ আকাশে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2014, 04:59 AM
Updated : 12 August 2014, 12:51 PM

উড়োজাহাজের পাইলট জানান, ভারতের জামসেদপুরের ওপর দিয়ে ঢাকার দিকে আসার সময় অল্পের জন্য সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ থেকে বেঁচে যায় তার বিমানটি।

ঘটনাটি ঘটে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে। কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি উড়োজাহাজের পাইলট তাদের বার্তা বুঝতে না পারায় এই দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল।

তবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ ও তাদের বৈমানিকের অভিযোগ, ভুলটি ছিল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের।

ভারতের জাতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বাঞ্চলীয় নির্বাহী পরিচালক এস ভাদুড়ি বলেন, কার ভুলে এই দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হচ্ছে।  

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ক্যাপ্টেন আরিফুল ইসলাম ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভিকে বলেন,  ঢাকা থেকে ২৭০ মাইল দূরে ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ার সময় কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে তাকে ২৯ হাজার ফুট উচ্চতায় নেমে আসতে বলা হয়।

কিন্তু তা করতে গেলে উড়োজাহাজের ‘ট্রাফিক কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম’ তাকে জানায়, ৩২ হাজার ফুট উচ্চতায় আরেকটি বিমান এগিয়ে আসছে। 

আরিফুল বলেন, আকাশে মেঘ ছিল না। তিনি স্পষ্ট দেখতে পান, আরেকটি বিমান তার দিকেই এগিয়ে আসছে।

বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানিয়ে নিজের উড়োজাহাজ আবার ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায় তুলে নেন ক্যাপ্টেন আরিফুল।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের নিশ্চয়ই কোনো ভুল হয়েছিল। কন্ট্রোল রুমের সাথে আমার সব কথাবার্তার রেকর্ড আছে। চাইলে তারা সেটা পরীক্ষা করতে পারে।”

কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, ওই সময় তিনটি বিমান ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট হংকং থেকে জেদ্দা যাচ্ছিল। আর ইউনাইটেডের ফ্লাইটটি আসছিল দুবাই থেকে ঢাকা। এছাড়া এমিরেটস এর আরেকটি বিমান ওই সময় আকাশে ছিল।     

বিমানগুলো কলকাতা থেকে ৩০-৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে জামসেদপুরের আকাশে ছিল। উড়োজাহাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল সুভাষ বসু বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রেডিওস্কোপ অপারেটর এমিরেটসের উড়োজাহাজটিকে নিচের এয়ার স্পেসে নেমে আসতে বলেন। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে না পেরে ইউনাইটেডের বৈমানিক তার উড়োজাহাজ প্রায় ৩০০ ফুট নামিয়ে আনেন। ফলে নিচে থাকা সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানটির সঙ্গে সংঘর্ষের উপক্রম হয়।

এতে বিমান দুটির ‘ট্রাফিক কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বৈমানিকদের সংকেত দিতে থাকে। 

এরপর ইউনাইটেডের  পাইলট দ্রুত তার বিমান আগের উচ্চতায় ফিরিয়ে নিলে মাঝ আকাশে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়।   

সুভাষ বসু বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের একজন কর্মকর্তা বলেন, আকাশ পথে ওপরে ও নিচ দিয়ে চলা দুটি বিমানের মধ্যে অন্তত এক হাজার ফুট ব্যবধান রাখার নিয়ম। কিন্তু ওই সময় ইউনাইটেড ও সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমান দুটি ৭০০ ফুটের মধ্যে চলে এসেছিল।

‘ট্রাফিক কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম’ ঠিকমতো কাজ না করলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারতো বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

ইউনাইটেডের মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের এজিএম কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুলে এমন হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখব।”