‘মায়ের কাছ থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার শিক্ষা’

‘বঙ্গমাতা’বেগম ফজিলাতুন নেছার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈরী সময়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার শিক্ষা তিনি মায়ের কাছেই পেয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2014, 12:37 PM
Updated : 8 August 2014, 03:00 PM

তিনি বলেছেন, “প্রতিকূল সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার শক্তি দেখেছি আমি আমার মায়ের মধ্যে। মায়ের দৃঢ়তার জন্যই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে সামরিক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাননি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় শুক্রবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বেগম ফজিলাতুন নেছার ভূমিকা তুলে ধরে তাদের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক জীবনে যে মোড়গুলো এসেছে, সেসব সময়ে মায়ের দৃঢ়তা দেখেছি।বাবার ছিল রাজনীতি আর মায়ের ছিল সিদ্ধান্ত নেয়ার দৃঢ়তা। আমার মা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।”

এর উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার স্মৃতি রোমন্থন করেন, যে মিথ্যা মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। 

ওই মামলায় প্যারোলে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে সামরিক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাননি। পরে গণআন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবুর রহমানকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয় তখনকার পাকিস্তান সরকার। 

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মা কোনোদিন পাকিস্তান-করাচি যাননি। মায়ের জন্যই আব্বা প্যারোলে মুক্ত হয়ে পাকিস্তানে আলোচনার জন্য যাননি।

“তখন আওয়ামী লীগের অনেক হোমড়া চোমড়া নেতা মাকে বলেছিল, ‘ভাবী, ওরা মুজিব ভাইকে মেরে ফেলবে। আপনি বিধবা হবেন। আপনার ছেলে-মেয়েরা এতিম হবে।’ মা শুধু বলেছিলেন, ‘শুধু আমি কোন? আরো ৩৪ জনের পরিবার আছে। তাদের কি হবে’?”

১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বিপ্লব করে দেশকে স্বাধীন করার কথা ভাবলে তাতে স্ত্রীর সমর্থন পেয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দেয়ার পর তার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন যে হরতাল হয়েছিল, তা সফল করতে মায়ের বিশাল অবদান ছিল।”

শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বঙ্গবন্ধু জেলে গেছেন, তখনই নেতা-কর্মীদের বাজারের টাকা দেয়া থেকে শুরু করে সব খোঁজ-খবর নিয়েছেন  ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

“কোনোদিন মায়ের মুখে আর্থিক দৈন্যতার কথা শুনিনি। যেদিন বাসায় বাজার হতো না, সেদিন বলতেন, আজকে আমরা গরিব খিচুরি খাব। মিন্টো রোডের বাসা ছেড়ে নাজিরাবাজারের ছোট একটা বাসায় উঠলাম। আব্বা জেলে। মা সোফাটা বেচে দেয়ার সময় বললেন, এতো ছোট ঘরে এতো বড় সোফা দরকার নেই।

“আমার এখনো মনে আছে, ফ্রিজ বিক্রির সময়ে বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেয়ে শরীর খারাপ হচ্ছে। ওটা রাখার দরকার নেই।

“মা গয়না বিক্রির আগে বলতেন, ওগুলো পুরনো হয়ে গেছে। আর দরকার নেই। আর আব্বা তো সব সময় বলতেন, তোমরা গহনা পরে কাদের দেখাবে? যে দেশের মানুষ দু’বেলা খেতে পারে না, তাদের?”

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতিবিদ বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেও মায়ের স্নেহ পেয়ে তারা বড় হয়েছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম এবং শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন।