মৌলবাদীদের হুমকিতে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া এই লেখিকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি ভারতেই থাকতে চাই… আর কোথায়ই বা যাবো।”
“আমি ইউরোপের নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রেও স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন আছে। কিন্তু আমি ভারতে থাকতে চাই সাংস্কৃতিক যোগযোগের কারণে। এখন যদি বাংলাদেশ আমাকে ঢোকার সুযোগ দেয়, তারপরও আমি বাকি জীবন ভারতেই থেকে যেতে চাইব।”
তসলিমা জানান, বাংলাদেশে তার যতো বন্ধু ছিল, ভারতে গত ২০ বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি বন্ধু তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসক তসলিমা গত শতকের ’৯০ এর দশকে লেখালেখি শুরুর পর আলোচনায় উঠে আসেন। বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে উপন্যাস ‘লজ্জা’ প্রকাশের পর মৌলবাদীদের হুমকি ও ব্যাপক হৈ চৈয়ের মধ্যে দেশ ছাড়ার পর তার সময় কেটেছে বিভিন্ন দেশে।
সুইডেনের নাগরিকত্ব থাকলেও গত দুই দশকে ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশে কাটিয়েছেন তসলিমা।
“বাংলাদেশের প্রকাশক আর বুদ্ধিজীবীরা আমার সাথে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্কের সুতোটাও ছিঁড়ে গেছে।”
সম্প্রতি ভারত সরকার তসলিমার রেসিডেন্ট পারমিট বাতিল করে ভিসার মেয়াদ দুই মাস নির্দিষ্ট করে দিলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন এই লেখিকা। রাজনাথ তাকে ফের দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্ট পারমিট দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
“আমি জানি না, তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমাকে দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্ট পারমিট দেয়া হবে। উনি যদি মন না বদলান, তাহলে আমি দীর্ঘমেয়াদী ভিসা পেয়ে যাব বলে আশাবাদী।”
এর আগে ২০০৭ সালে মৌলবাদীদের বিক্ষোভের মুখে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর তখনকার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমর্থন পেয়েছিলেন বলে জানান তসলিমা। সেই মোদীই এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
“কেবল ২০০৭ সালে নয়, গত নির্বাচনের সময়ও তিনি (মোদী) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমার সঙ্গে অবিচার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিছু মুসলিম মৌলবাদীর বিক্ষোভের কারণে রাজ্যের সেই সময়ের বাম সরকারই আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের করে দিয়েছিল। অথচ তারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে।”
সেই সময় যারা তসলিমার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। তাদের মধ্যে অন্তত দুজন বর্তমানে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদের দায়িত্বে রয়েছেন।
মুসলিম মৌলবাদীদের হুমকির কারণে গত বছর আরেক বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদীকেও গত বছর কলকাতায় আসতে দেয়নি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার।