সড়কে সমাবেশ তোবাকর্মীদের

বেতনের দাবিতে ঈদের আগের দিন থেকে কারখানা ভেতরে অনশনরত তোবা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা কারখানার বাইরে সড়কে সমাবেশ করে পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2014, 05:39 AM
Updated : 2 August 2014, 09:09 AM

শনিবার দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কারখানার বাইরে চলা এই সমাবেশে যোগ দেয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ শেষে তারা পুনরায় কারখানার ভেতরে অনশনে বসেছেন।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার সকালে রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে সড়ক অবরোধ করতে মিছিল নিয়ে সড়কে নামে শ্রমিকরা। তবে পুলিশের বাধায় তারা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে।

হোসেন মার্কেট নামে পরিচিত ওই ভবনে তোবা গ্রুপের কারখানাগুলো। সমাবেশের কারণে সড়কের একপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। জলকামানের গাড়ি নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থানও ছিল সেখানে।

তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন তার অন্য কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিক নিহতের মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তবে সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন তিনি।

মালিকের অনুপস্থিতিতে তোবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার দেড় হাজারের বেশি শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন না। বেতনের দাবিতে ঈদের আগের দিন ২৮ জুলাই তারা কারখানায় অনশনে বসেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে তোবা গ্রুপের শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, “আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা মালিকের মুক্তি না, আমাদের বেতন চাই।”

তোবা গ্রুপের এই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে সফল না হওয়ার কথা পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলে এলেও তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ শ্রমিকদের। 

পারুল বলেন, “তারা (বিজিএমইএ) বারবার তারিখ দিয়েও আমাদের বেতন আদায় করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”

ঈদের আগে পাওনার বিষয়ে পদক্ষেপ চাইতে বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে শ্রমিকরা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সমাবেশে তোবা গ্রুপের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ, কারখানাগুলো সচল রাখা, আন্দোলনে অংশ নেয়া শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও জানান।

তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শ্রমিকদের চার মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবি তোলেন।

তা না হলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন তিনি।

তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চেয়েও বিভিন্ন জটিলতার জন্য তা করা যাচ্ছে না জানিয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকারের পদক্ষেপ চেয়ে আসছে বিজিএমইএ নেতারাও। 

তোবার কারখানাগুলো রাষ্ট্রায়াত্ত করার দাবি জানিয়ে সিপিবি সভাপতি বলেন, “তোবার যে কারখানাগুলোর শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না সে কারখানাগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকারের মালিকানায় নিয়ে পরিচালনা করতে হবে।”

বিজিএমইএ শ্রমিকদের ‘গণহত্যার’ পরিকল্পনা করছে অভিযোগ করে তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান সমাবেশে বলেন, “ব্যাংক খোলা থাকলে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। কোনো ধরনের ছলচাতুরি সহ্য করা হবে না।”

গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি বিজিএমইএ-এর ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “তারা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে যা করছে, তারা ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য। শ্রমিকরা কাজ করেছে, কিন্তু বেতন পাবে না, তা তো হয় না।”

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনু মুহাম্মদ বলেন, “শ্রমিকদের শোষণ করে যারা মুনাফা অর্জন করে অট্টালিকা গড়ে তুলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন।”

সমাবেশে খুশি কবির, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সহ সভাপতি রুবিনা আক্তার আশা, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির নেতা মোফাজ্জল হোসেনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা যোগ দেন।