ফুলহরিতে থামছে না বর-বউয়ের কান্না

বরযাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন নিহত হওয়ার পর ঝিনাইদহের কাজীপাড়া ফুলহরি গ্রামে এখন কেবলই শোকের মাতম।

বিমল সাহা ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2014, 02:47 PM
Updated : 1 August 2014, 02:47 PM

আগের রাতেও যেখানে চলছিল বধূ বরণের আয়োজন, সেখানে এখন শেষকৃত্যের স্তব্ধতা।

নববধূ জ্যোৎস্না বিশ্বাসও শ্বশুর বাড়িতে পা রেখে কান্না থামাতে পারছেন না।

কালীগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জ্যোৎস্না আক্ষেপ করে বলেন, “আমাদের বিয়ের জন্য এতোগুলো মানুষের প্রাণ গেল। এ দুঃখ সারা জীবন বইতে হবে।”

কালীগঞ্জ উপজেলার সাকো মথনপুর গ্রামের সুবাস কুমারের মেয়ে জ্যোৎস্না বিশ্বাসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ে হয় শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের সাধন কুমার বিশ্বাসের ছেলে তাপস কুমার বিশ্বাসের।

গাঁয়ের ছেলের বিয়ে, তাই বাস বোঝাই করে বরযাত্রী হয়ে ফুলহরি থেকে সাকো মথনপুরে গিয়েছিলেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

বিয়ের আসরেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বউ নিয়ে নিজেদের গ্রামে ফেরার পথে ভোর পৌনে ৪টার দিকে বারোবাজার রেলক্রসিংয়েই ঘটে দুর্ঘটনা।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান, সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস বারোবাজার রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় লাইনে উঠে পড়ে বরযাত্রীবাহী বাসটি। 

“ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ওই অবস্থায় ট্রেনটি প্রায় আধা কিলোমিটার পথ বাসটিকে ঠেলে নিয়ে থেমে যায়।”

স্থানীয় জনতা, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকেই নয় জনের লাশ উদ্ধার করেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আরো দুই জন।

আলাদা মাইক্রোবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বর তাপস ও কনে জোৎস্না।কয়েক মুহূর্ত আগেই রেল লাইন পার হয়ে যায় তাদের মাইক্রোবাস।

ওই বাসের যাত্রী ফুলহরির বাসিন্দা নিমাই সাহা জানান, রেলগেইট খোলা পেয়ে চালক কোনো কিছু না ভেবেই গাড়ি লাইনে উঠিয়ে দেন। এরপরই প্রচণ্ড শব্দে সংঘর্ষ হয় এবং ট্রেনের ইঞ্জিন বাসটিকে ছেঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে।

এ সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে অনেকেই বাসের জানালা দিয়ে ছিটকে পড়েন। বাসে থাকা প্রায় ৭০ জন আরোহীর সবাই কম বেশি আঘাত পান।

শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বর-কনের মাইক্রোবাস যখন কাজীপাড়া ফুলহরিতে পৌঁছায়, ততোক্ষণে পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ। 

ফুলহরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ জানান, দুর্ঘটনার খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। বিকালে লাশগুলো গ্রামে পৌঁছানোর পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

তিনি বলেন, “এতোগুলা মানুষ একসঙ্গে মারা গেল… এই গ্রামের মানুষ এই শোক ভুলবে কেমন করে…।

বর তাপস ফুলহরি হাই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন- স্টেশন মাস্টার  আর গেইটম্যানের গাফিলতির কারণেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল।

নিহতদের মধ্যে যে দশজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাদের পাঁচজনই ফুলহরি কাজীপাড়ার বাসিন্দা।

এরা হলেন- সুধীর কুমার (৪০), বিপ্লব বিশ্বাস (২৫), সুজয় সাহা (৩০), শোভন দে (২), ও অলক কুণ্ডু।

এছাড়া কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুরের গৃহবধূ বন্যা রানী (৩৫) তার ছেলে কৌশিক অধিকারী (৮) এবং বন্যার ননদ কলেজছাত্রী কৃষ্ণা (২০) এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের বিমল বিশ্বাস (৪৫) ও উজ্বল দাস (২৫) নিহত হয়েছেন এ ঘটনায়।

সন্ধ্যার আগেই লাশ হস্তান্তর শেষে তাদের শেষকৃত্য হয়ে গেছে বলে ফুলহরির চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ জানান।