ঢাকা মেডিকেলে ছুটির আমেজ, রোগীদের ভোগান্তি

সিএনজি অটোরিক্সার ধাক্কায় মাথায় আঘাত পাওয়া খলিলকে (১২) নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  চিকিৎসার জন্য আসেন তার চাচা মোতালেব মিয়া।

সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2014, 12:46 PM
Updated : 1 August 2014, 01:27 PM

বেশ কিছুক্ষণ পরও হাসপাতালের ১০০ নাম্বার ওয়ার্ডের সামনে তাকে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এ ওয়ার্ডের চিকিৎসক ১০৩ নাম্বার ওয়ার্ডে রোগী দেখছেন।

ঘণ্টাখানেক পর চিকিৎসক ফিরে খলিলকে দেখলেন এবং মৃত ঘোষণা করলেন।

শোকবিহ্বল মোতালেব মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শুধু বললেন, “ভাই, পোলাডারে যহন আনছিলাম তহনও বাঁইচা ছিল।”

পিকআপের ধাক্কায় আহত স্ত্রী জেসমিন বেগমকে (২৭) নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে একই ওয়ার্ডের সামনে চিকিৎসকের অপেক্ষায় ছিলেন আব্দুল জলিল।

ট্রাকচালক জলিল জানালেন, দুপুর আড়াইটার দিকে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য তিনি চিকিৎসকের অপেক্ষায় আছেন।

অবশেষে বিকাল সাড়ে ৫টায় চিকিৎসক ওয়ার্ডে ফিরে ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০, ১০৩, ২০১ ও ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে মূলত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। আর প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে আইএমওর সঙ্গে ‘জুনিয়র চিকিৎসক’ এবং শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসক থাকার কথা।

কিন্তু ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একজন আইএমও (ইনডোর মেডিকেল অফিসার) ছুটোছুটি করে ওই চার ওয়ার্ডে রোগী দেখছেন। বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১০৩, ২০১ ও ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েকবার করে ঘুরেও কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ঈদের ছুটির কারণে জুনিয়র কিংবা ইন্টার্নরা কেউই হাসপাতালে নেই। ওই তিন ওয়ার্ডে আইএমও না থাকায় একজনকেই রোগী দেখতে হচ্ছে। 

১০০ নম্বর ওয়ার্ডের আইএমও ডা. পীযুষ কান্তি মিত্র বলেন, “ঈদের ছুটি। তাই একাই চার ওয়ার্ড সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি জানান, এ ওয়ার্ডগুলোতে ৪৫টি করে বেড। কিন্তু সেই তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে অনেক রোগীকে মেঝেতেই থাকতে হয়।

“অন্য সময়ে জুনিয়র ডাক্তার, ইন্টার্ন ডাক্তাররা থাকেন। সকাল বেলায় কলেজের শিক্ষকরা এসে রোগীদের খোঁজ খবর নেন। ফলে আমাদের ওপর এতো চাপ থাকে না।

“শিক্ষকরা এখনো প্রতিদিন আসছেন। কিন্তু জুনিয়র কিংবা ইন্টার্ন ডাক্তাররা ঈদের ছুটিতে।”

অন্য তিন ওয়ার্ডের আইএমওরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “আসলে সবারই তো ঈদ-পার্বণ আছে। আশা করি রোববার থেকে সবাই আসা শুরু করবে।”

তবে জরুরি ওই তিন ওয়ার্ডে আইএমও না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিস্ময় প্রকাশ করেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, “এমন তো হওয়ার কথা নয়।অনারারি আর ইন্টার্ন  ডাক্তাররা ছুটিতে থাকতে পারেন, কিন্তু বেশিরভাগ আইএমও (নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক) তো ডিউটিতে আছেন।”

হাসপাতালে ২৭৫ জন আইএমও রয়েছেন জানিয়ে উপ-পরিচালক বলেন, “ঈদে ৩০ জন আইএমওকে ছুটি দেয়া হয়েছে। তাই চিকিৎসক স্বল্পতায় একজন আইএমওকে একাধিক ওয়ার্ড কভার করার মতো অবস্থা নেই।”

হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী যথেষ্ট চিকিৎসক রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “তারপরও যেহেতু আপনি বলেছেন, আমি খোঁজ নেব।”