অনশনের পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি তোবাকর্মীদের

বিজিএমইএর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভ-সমাবেশের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে তোবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2014, 09:44 AM
Updated : 1 August 2014, 07:46 PM

অনশন চালিয়ে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডায় হোসেন সুপার মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচদফা দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, দাবি আদায়ে শনিবার সকাল ১১টায় হোসেন মার্কেটের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে।

এসব দাবি নিয়ে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মিশু বলেন, “আন্দোলন পরিচালনার জন্য আমরা ‘তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করেছি। এ কমিটি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সারাদেশ ঘুরে সমাবেশ করবে।”

শ্রমিক নেতা মিশুও গত সোমবার থেকে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে তোবার শ্রমিকদের সঙ্গে অনশন চালিয়ে আসছেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম ছাড়াও সিপিবি, বাসদ, গণতান্ত্রিক বামমোর্চাসহ ১১টি প্রগতিশীল সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে তোবাকর্মীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন।

তোবা শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবি হলো- শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, ওভারটাইম এবং ঈদের বোনাস অবিলম্বে পরিশোধ, তোবা গ্রুপের দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য সব কারখানা সচল রাখা, যে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাদের সরকারভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, তোবা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেনের জামিন বাতিল করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া এবং তাজরীন গার্মেন্টসে হতাহত ও নিখোঁজ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া।

মোশরেফা মিশু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেলোয়ার হোসেনকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে বিজিএমইএ নানান অজুহাত বের করছে। তবে আমরা দেলোয়ার হোসেনের জামিন বাতিল চেয়ে তার ফাঁসির দাবি করছি।”

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য বকেয়া সংশ্লিষ্টদের পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে আরো বড় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১২ জন নিহত এবং দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন।

উত্তর বাড্ডায় একই গ্রুপের পাঁচটি কারখানার ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক তাদের মে, জুন ও জুলাই মাসের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গত মাস থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। বিজিএমইএ বকেয়া পরিশোধের জন্য কয়েক দফা সময় দিয়েও ব্যর্থ হলে শ্রমিকরা ঈদের আগের রাত থেকে অনশন শুরু করেন।

এদিকে তাজরীনের মামলায় কারাগারে থাকা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে গত ২৪ জুলাই জামিন দেয় হাই কোর্ট। অনশনরত শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছিলেন, দেলোয়ারকে জেল থেকে বের করে আনতেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখেছে।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান কচি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতার আংশিক পরিশোধের জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় চান।

এ বিষয়ে মোশরেফা মিশু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রমিকরা টানা পাঁচদিন ধরে অনশনে আছেন। অথচ বিজিএমইএ আরো সাতদিন সময় চাইলো! এটা উপহাস ছাড়া আর কিছু না।”

তোবার কারখানা ভবনের সপ্তম তলায় অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের চিকিৎসা দিচ্ছেন প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের ডা. আরজু।

তিনি জানান, অনশনের প্রথম দিন থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৭৫ জনকে স্যালাইন নিতে হয়েছে।