জবানবন্দি দিতে রাজি হননি এসআই জাহিদ

মিরপুরের ঝুটব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এসআই জাহিদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2014, 03:42 PM
Updated : 31 July 2014, 03:42 PM

তিন দফায় ১২ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার জাহিদ এবং মামলার অন্য আসামি জাহিদের সোর্স নাসিম শেখকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়।

জাহিদ মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে’র খাসকামরায় মামলার ঘটনা সম্পর্কে মুখ না খুললেও অন্য মহানগর হাকিম অশোক কুমার দত্তের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন নাসিম। জবানবন্দি শেষে তাকে পরে কারাগারে পাঠানো হয়।

ফাইল ছবি

অন্যদিকে জাহিদকে আবার দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার তিনদিনের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি নিয়ে মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা চক্রবর্তী এ আদেশ দেন।

নাসিম তার জবানবন্দিতে জানান, প্রায় দুই মাস আগে এসআই জাহিদের সঙ্গে তার পরিচয় হওয়ার পর থেকে সোর্স হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি।

গত ১৩ জুলাই রাত পৌনে ৩টায় এসআই জাহিদ তাকে ফোন করে ব্যবসায়ী সুজনকে চেনেন কিনা জানতে চান।

নাসিম জানান, সুজনকে চেনার কথা বলার পর জাহিদ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ সুজনকে আটকের কথা জানিয়ে তাকে থানায় যেতে বলেন।

ওসি সালাউদ্দিনের নির্দেশে সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলেও এসআই জাহিদ ওইরাতে জানিয়েছিলেন বলে জাবনবন্দিতে উল্লেখ করেছেন নাসিম।

নাসিম মিরপুর থানায় গিয়ে একজন নারীকে বাচ্চা ( সুজনের স্ত্রী-সন্তান) বসে থাকতে দেখেন। এ সময় নাসিমকে সেহরির খাবার আনতে পাঠানো হয়। নাসিম থানায় ফিরে এসে জানতে পারেন, সুজনকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে আবার অন্য একটি কাজে নাসিম থানার বাইরে যান। ফরে এসে দেখেতে পান সুজনকে নিয়ে লেগুনায় করে সনি সিনেমা হলের পাশে লতিফ ক্লিনিকে নেয়া হচ্ছে।

নাসিম জানান, লতিফ ক্লিনিকে অক্সিজেন না থাকায় সুজনকে সেলিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সুজনকে ভর্তি না নিলে প্রথমে  সোহরাওয়ার্দী পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

পরে নাসিম ঢাকা মেডিকেলে গেলে সেখানে এসআই জাহিদের সঙ্গে তার দেখা হয়। সে সময় জাহিদ বলেছিলেন, “আমার মনটা খুব খারাপ। সুজন মারা গেছে”, বলেন নাসিম।

জবানবন্দিতে নাসিমের দেয়া এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মন।

ঘটনার পর গত ১৬ জুলাই দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১২ জুলাই রাতে ব্যবসায়ী সুজনকে তার ধানমন্ডি শংকরের বাসা থেকে মিরপুর থানায় ধরে নিয়ে যান এসআই জাহিদ। পরে সুজনকে নিয়ে ‘অস্ত্র উদ্ধারে’ বের হন তিনি। পথেই সুজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় এসআই জাহিদকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ঘটনা তদন্তে মিরপুর বিভাগের এডিসিকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে পুলিশ।

এজাহার থেকে  জানা যায়, লাশের  ময়না তদন্ত  রিপোর্ট ও সুরতহাল রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, মৃতদেহের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল।

এছাড়াও আদালতে দায়ের করা মামলায় সুজনের স্ত্রী লুসি জানিয়েছিলেন, বাসায় অভিযানের সময় সুজনকে বাথরুমের দরজা আটকে পানি ভরা বালতিতে মুখ ডুবিয়ে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। থানায়ও তার স্বামীকে নির্যাতন করা হয়।