তিন মাসের বকেয়া বেতন আর বোনাসের দাবিতে রাজধানীর তোবা গ্রপের পাঁচটি পোশাক কারখানার যে তিন শতাধিক শ্রমিক ঈদের আগের রাত থেকে অনশন করে আসছেন, রুমা বেগম তাদেরই একজন।
বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় ফিনিশিং রুমের টেবিলে অনেক সহকর্মীর মতো রুমাও শুয়ে আছেন হাতে স্যালাইনের সূঁচ নিয়ে। যতো দিন গড়াচ্ছে, অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে।
দুর্বলতার কারণে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছেন ফিনিশিং রুমের টেবিলে।কক্ষের বেঞ্চ, টেবিল আর মাটিতে বিমর্ষ যে শ্রমিকেরা বসে আছেন, তাদের কণ্ঠও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
রুমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই, শরীর খুব দুর্বল হয়ে গেছে। স্যালাইন নিতে বাধ্য হইছি। আমরা মইরা গেলেও মনে হয় বেতন পামু না, তাই না?”
তাদের সমন্বয়ক মুজিবুল হক আরজু জানান, অনশন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০ জন শ্রমিককে তারা স্যালাইন দিয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্যালাইন নিয়েছেন ২৩ জন শ্রমিক।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেচ্ছাসেবী জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সদস্য আহমেদ মহীউদ্দিন জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় ডলি নামে এক শ্রমিককে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অনশনের চতুর্থ দিনেও বকেয়া বেতন ও ওভারটাইমের টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ কিংবা সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
তোবা গ্রুপের কারখানা তাইফ ডিজাইনের শ্রমিক হুমায়ূন কবির বলেন, “গরীবদের নিজেদের প্রাপ্য পেতে কষ্ট করতে হয়। অথচ যারা আমাগো কষ্টের টাকায় গাড়ি-বাড়ি করছে, তারা আমাগো বেতনটাও দেবার চায় না। সরকার তো সবই পারে, খালি আমাগো বেতনটা দিয়া দিতে পারে না।”
আন্দোলনরত শ্রমিকরা অবস্থান করছেন ১২ তলা হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায়। ভবনের সামনে রয়েছে পুলিশের একটি জলকামান ও কয়েকটি টহল গাড়ি। মার্কেটের পাশে ও পেছনেও পুলিশ সদস্যদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
পুলিশের গুলশান জোনের উপ-কমিশনার বলেন, “শ্রমিকরা যাতে তাদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো পায়, সেজন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিজিএমইএ ও কারখানার মালিকরা।”
শ্রমিকদের এ দুর্দর্শাকে ‘অত্যন্ত অমানবিক’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনশনে শরীর আর সায় না দিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
তোবা ফ্যাশনসের কাটিং সুপারভাইজার মুজিবুর রহমান বলেন, “জীবন দিয়ে হলেও অধিকার আদায় করে ছাড়ব।”
ভবনের নবম তলার প্যাকেজিং রুমে তোবা গ্রুপের মালিকের শাশুড়ি লাইলী বেগম শ্রমিকদের আন্দোলনে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন গত শুক্রবার থেকে। শ্রমিকদের দেয়ার খাবার আর পোশাকে ওই কক্ষেই দিন কাটছে তার।
তাকে তিন বেলা খাবার দেয়ার পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা তার গোসলের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে বলে জানান মুজিবুর।
লাইলী বেগমের কাছে তাদের একটাই অনুরোধ - তিনি যেন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার মেয়ে মাহমুদা আক্তার মিতাকে দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিতে বলেন।
লাইলী বেগম অবশ্য আশাবাদী, মেয়ে মিতা শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাবা, আমি আমার পরিবারের সবাইকে অনুরোধ করছি, তারা যেন তাড়াতাড়ি বকেয়া শোধ করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যায়। আমার মেয়ে মিতা এখানে আমাকে দেখতে না আসলেও নিশ্চয়ই সে শ্রমিকদের বেতনের টাকা সংগ্রহ করে আমাকে এখান থেকে মুক্ত করবে।”