প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান বা মিয়ানমারের কাউকে আসামে আশ্রয় দেয়ারও বিরোধিতা করেছে সংগঠনটি।
উলফার যে অংশটি ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার বিরোধিতা করে আসছে, তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “রাজ্য সরকার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা ‘বহিরাগতদের’ আশ্রয় দেয়ার পরিকল্পনা করে আসামের আদি অধিবাসীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। কেবল মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের পক্ষেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব।”
আসামের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভা কয়েকদিন আগে এই সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বলা হয়, ‘সাম্প্রদায়িক হামলা ও অবিচারের শিকার হয়ে’ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যারা পালিয়ে আসামে এসেছেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের ভারতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় দিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি নীতিমালা করার অনুরোধ জানাবে রাজ্য সরকার।
উলফা বলছে, রাজ্য সরকার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার নামে কংগ্রেসের ‘পার্টি ক্যাডার’দের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। অথচ রাজ্যের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
উলফার বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তারা হিন্দু বা মুসলিম যে ধর্মেরই হোক না কেন। আসামে কোনো রক্তপাত হলে তার দায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়ালকেই নিতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ নিয়ে আসামে ভোট ব্যাংক বাড়ানোর যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তাতে সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যখন আসামের আদিবাসীরা ‘নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে উঠবে’।
“এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের এখনই সময়। আসাম সরকার যে অবৈধ অভিবাসীদের এখানে অশ্রয় দেবে, তাদের আমরা অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেব।”
কিন্তু এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারের দিনগুলোতে উলফা সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় পায় বলে ভারতের অভিযোগ। ওই সময়ই উলফা নিজেদের অবস্থান বদলায় এবং ১৯৯০ সালে সংগঠনের একটি বুকলেটে বলা হয়, আসামের উন্নয়নে হিন্দু-মুসলমান সবারই অবদান রয়েছে। সুতরাং অভিবাসীদের মধ্যে যারা আসামের স্বাধীনতার পক্ষে, তাদের স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবেই গণ্য করা উচিৎ।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উৎখাত শুরু করায় এবং চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার ফাঁসির রায় আসায় সংগঠনটি বাংলাভাষী অভিবাসীদের ব্যাপারে পুরনো অবস্থানে ফিরে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।