বাগেরহাটের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক জামিল আহমদ শিশুটির বাবা। তারা থাকেন খুলনায়। ক্যান্সারাক্রান্ত তালহাকে নিয়ে এবার তাদের ঈদ কেটেছে হাসপাতালে।
সীমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই মাস আগে তারা খেয়াল করলেন যে ছেলেটির জ্বর হচ্ছে। কিছু খেতে চাইত না তালহা।
প্রথমে খুলনা হাসপাতালে নেয়ার পর জানা গেল যে ক্যান্সার হয়েছে তালহার। এরপর ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন জামিল। বিএসএমএমইউতে কয়েকদিন থাকার পর সিট না পেয়ে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছেলেকে।
তালহার কেমোথেরাপি চলছে। জামিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাক্তার ভয় পেতে না করসে। তবু ভয় লাগে।”
“ছেলেকে ঈদে নতুন পোশাক না, ওষুধ কিনে দিয়েছি,” বলতে বলতে চোখের পানি মোছেন জামিল।
সারাদেশ যখন ঈদের আনন্দে ভাসছে, তখন ঢাকার আগারগাঁওয়ের শিশু হাসপাতালে ঈদ কেটেছে তালহার মতো সাড়ে ছয়শ শিশু ও তাদের পরিবারের।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বেডে লাল পাঞ্জাবি পড়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে দেখা গেল ৫ বছরের স্বাধীনকে। কিছু জানতে চাইলে কেবল কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি, এরপর মায়ের বুকে মুখ লুকায়।
শিশুটির বাবা রহমান রাজবাড়ী জেলায় রিকশা চালায়। মা রহিমা ছেলেকে হাসপাতালে আছেন দেড় মাস ধরে।
রহিমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসপাতালে থাকা খাওয়ার খরচ না থাকলেও ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
নিম্ন আয়ের এই পরিবারের জন্য এই ভার বহন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় জেনে রহিমা বলেন, “আপনেরা যদি লেইখা ওর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে দেন বাবা, ওর জীবনটা বাঁচব।”
শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই হাসপাতালের সাড়ে ছয়শ’ শয্যার আড়াইশ’টিতে থাকতে হলে কোনো ভাড়া লাগে না। এসব সিটকে বলে ‘ফ্রি সিট’।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে ‘ফ্রি সিটের’ অসুস্থ শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি তিন বেলা বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
“যেসব ওষুধ হাসপাতালে নেই কিংবা রোগীর কোনো ডিজিটাল পরীক্ষা লাগলে তার অর্ধেক খরচ এসব রোগীর পরিবারকে বহন করতে হয়,” বলেন ওয়ার্ড মাস্টার হমান।
হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৫ নম্বর বেডে থাকা বাবলীর বাবা মুসলিম মিয়া রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
২০/২২ দিন আগে খাট থেকে পড়ে শিশুটি মাথায় আঘাত পায়। তার চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
একই ওয়ার্ডের ১৭, ১৮, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিন শিশুকে দেখা যায় মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
২ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছে শিশু তানহা। তার নানা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) এর ট্রাকশ্রমিক চান্দু মিয়া বলেন, তানহার বাম গালে ছোট ফোড়া হয়েছিল। তা বড় হয়ে ইনফেকশন হয়েছে।
তানহার বাবা জাহাঙ্গীর বরিশালে কৃষিকাজ করেন। শিশুটির মা রেশমা ১৭ দিন ধরে হাসপাতালে আছেন।
চান্দু মিয়া বলেন, “ওর (তানহা) বাবাকে এলাকায় কাজ করে সংসারের টাকা আনতে হয়। চাইলেও মেয়েটারে দেখতে আসতে পারে নাই।”
যারা হাসপাতালের ফ্রি সিটে রয়েছে, সে সব শিশুদের ঈদের দিন এবার মুরগি বিরানি দেয়া হয়েছে।
ঈদের আনন্দ করতে না পারলেও তা নিয়ে দুঃখ করার সময়ও নেই এই শিশুদের পরিবারের। তাদের প্রত্যাশা, শিশুরা সেরে উঠবে, আর সেটাই হবে তাদের ঈদ।