ঈদের ভোরে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১৮ জনের

ঈদের সকালে নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর ও ভোলায় পাঁচটি দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভোলা প্রতিনিধিনোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2014, 03:33 AM
Updated : 29 July 2014, 03:33 AM

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরিফ জানান,  ঈদে ঘরমুখো যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পথে একটি বাস মঙ্গলবার ভোরে সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের বারকোট এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়লে ছয় জনের মৃত্যু হয়। 

সকালে সাড়ে ৬টার দিকে ভোলার চরফ্যাশনে আরেকটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে তিন জনের মৃত্যু হয় বলে চরফ্যাশন থানার এস আই সাইফুল ইসলাম জানান। 

কাছাকাছি সময়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জালকুড়ি এলাকায় একটি প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে চার আরোহীর মৃত্যু হয় বলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনিছুর রহমান জানান।

আর ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার মালিগ্রাম ও চুমুরদি এলাকায় দুটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত হয়েছেন পাঁচজন। 

আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নোয়াখালী

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার জানান, রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা বলাকা এক্সপ্রেসের বাসটি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ যাচ্ছিল। ভোর ৪টার পর সোনাইমুড়ির বারকোট এলাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়।

এতে একই পরিবারের তিনজনসহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো অন্তত ৪০ জন।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার রামদেবপুর গ্রামের কবির হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আকতার (৩০), তার ছেলে আবু সায়েদ (৮) ও মেয়ে কহিনুর বেগম (৫), বেগমগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামের খোকন (৩৫) এবং রামগঞ্জের চিকন গ্রামের নুরুল হক (৪৫)।

স্থানীয় লোকজন দুর্ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে।

ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি উদ্ধার করে বলে পুলিশ সুপার জানান।

নিহত সেলিনার স্বামী কবির হোসেন একজন ঠিকাদারের সহকারী হিসাবে কাজ করেন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি।

যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাতে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে বেপরোয়া ড্রাইভিং। চালক বেপরোয়া চালালে সড়ক ১০ লেন ১২ লেন হলেও কোনো লাভ নেই।”

তিনি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গাড়ি চালকদের কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দেন।

ফরিদপুর

ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের এস আই আবদুল্লাহ জানান, ঈদের দিন সকালে উপজেলার মালিগ্রাম ও চুমুরদি এলাকায় দুটি মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়ে।

সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের চুমুরদি এলাকায় একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন।

মাইক্রোবাসের তিন আরোহীকে আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি ওই গাড়ির চালক আল আমিন (২২)। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে।

এর আধা ঘণ্টা আগে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মালিগ্রাম এলাকায় দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

এস আই আবদুল্লাহ জানান, একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে একজন নিহত ও চারজন আহত হন।

এ ঘটনায় নিহত জাহেদুলের (২৮) বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। আহতদের ফরিদপর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভোলা

চরফ্যাশন থানার এস আই সাইফুল জানান,  চট্টগ্রাম থেকে চরফ্যাশনে আসার পথে ভোলা ট্রান্সপোর্টের একটি গাড়ি ভোর সাড়ে ৬টার দিকে দুর্ঘটনায় পড়ে। 

“যাত্রীবাহী বাসটি চরফ্যাশনের কর্তারহাটের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত জন।

নিহতদের মধ্যে দুজন হলেন সালাউদ্দিন (৩৫) ও হেলাল (২০)। আকেজনের (৩৭) নাম জানা যায়নি।

নিহতদের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখা হয়েছে বলে এস আই সাইফুল জানান।  

আহতদের মধ্যে আব্দুল কাদেরকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া মিজান (৩৫), মোক্তার (২২), বিল্লাল (২৫), রোজিনা (১৮), রাসেল (২৫) ও আলাউদ্দিনকে (৩৬) চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনিছুর রহমান জানান, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ার দিকে যাওয়ার পথে কালো রঙের একটি প্রাইভেট কার জালকুড়ি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।

এতে ঘটনাস্থলেই গাড়ির আরোহী সুমন, পিন্টু, সালাম ও আবদুল্লাহর মৃত্যু হয়।

তাদের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আনিছ।