সোমবার চাঁদ দেখা গেলে সারা দেশে ঈদ উদযাপিত হবে মঙ্গলবার। তবে, এসব গ্রামের বিভিন্ন পীরের অনুসারীরা বরাবরই রোজা, ঈদ, শবে-বরাত, শবে-মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে।
বিভিন্ন জেলা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম
সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে এবারো একদিন আগেই ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।
সাতকানিয়ার মীর্জা খীল দরবার শরীফের পীর হযরত শাহ জাহাগীরের অনুসারীরা আরবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে দীর্ঘদিন ধরেই ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।
চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক সরোয়ার হোসাইন চৌধুরী জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় মির্জাখীল দরবার শরীফে এবারের ঈদের জামাত হয়।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিণ্ন অঞ্চল থেকেও এই পীরের অনুসারীরা দরবার শরীফে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় কছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে চন্দনাইশ ও আনেয়ায়াতেও একদিন আগে এই পীরের অনুসারীরা ঈদ জামাতে অংশ নেন।
এছাড়া কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, হ্নীলা, কুতুবদিয়া, আলিকদম ও সীতাকুণ্ডের মাহমুদাবাদ এলাকায় দরবার শরীফের অনুসারীরা সোমবার ঈদ পালন করছেন। চন্দনাইশেও ঈদের জামাত হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জে সোমবার ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে নয়টি গ্রামে।
সদর উপজেলার আনন্দপুর, শিলই, নায়েবকান্দি, আধারা, মিজিকান্দি, কালিরচর, বাংলাবাজার, বাঘাইকান্দির ও কংসপুরা গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা ‘জাহাগীর তরিকায়’ ঈদ পালন করছেন। সকাল ৯টায় শিলই ঈদগাহে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মনিরুল ইসলাম।
শরীয়তপুর
জেলার সদর, নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও চরাঞ্চলের প্রায় ৩০টি গ্রামের ‘সুরেশ্বর দরবার শরীফের’ অন্তত ১০ হাজার অনুসারী সোমবার ঈদ উদযাপন করছেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় সুরেশ্বর দরবার শরীফে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন দরবারের মুত্তাওয়ালী সৈয়দ বেলাল নূরী।
তিনি জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় শত বছর ধরে তারা ঈদ ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের ‘জাহাগীর তরিকার’ অনুসারীরাও সোমবার ঈদ উদযাপন করছেন ।
সদর উপজেলার ফতুল্লা লামাপাড়ায় বেলা পৌনে ১১টায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন হযরত শাহ সুফী মমতাজিয়া মাদ্রাসার মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ।
প্রতি বছরের মতো এবারও গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি এই জামাতে অংশ নেয়।
মুফতি আনোয়ার জানান, তারা হানাফি মাযহাবের অনুসারী। এই মতে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ পালন করার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ীই তারা রোজা ও ঈদ পালন করে আসছেন।
বরগুনা
বরগুনার ১০ গ্রামের বাসিন্দা হযরত কাদেরিয়া চিশতিয়া তরিকা পন্থী ও আহামদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন সোমবার ঈদ উৎসব করছেন।
সদর উপজেলার ধুপতি, গৌরীচন্না, পাজরাভাঙ্গা, কালিরতবক, আমতলা, বেতাগীর বকুলতলী, আমতলীর গোজখালী, কুকুয়া, পাথরঘাটার সিংড়াবুনিয়া ও কাকচিড়া গ্রামের আড়াই হাজারের বেশি মানুষ ঈদ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, সকালে বেতাগীর বকুলতলী মালেক চেয়ারম্যানের বাড়ি, আমতলীর গোজখালী শাহসাবের বাড়ি ও কুকুয়ার মসজিদে ঈদের নামাজ হয়েছে।
মাগুরা
মাগুরা শহরের স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার অর্ধ শতাধিক মুসল্লি সোমবার ঈদ পালন করছেন। সকাল ১০ স্টেডিয়ামপাড়া শিশু বাগান এলাকায় তারা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, যেহেতু পৃথিবীটা এক, তাই পৃথিবীর যে প্রান্তেই চাঁদ দেখা যাক না কেন তার খবর শুনলেই রোজা রাখা শুরু করতে হবে। একইভাবে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়ার ভিত্তিতেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগের প্রায় ২০ হাজার পরিবার সোমবার ঈদ করছে।
সকাল ১০টায় বিভাগের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের তাজকাঠী হাজী বাড়ী জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া মসজিদে।
মসজিদের ইমাম দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ কাঞ্চননগর পশ্চিম এলাহাবাদ জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী।
পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে এবং মক্কা নগরীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করেন তারা।
বরিশাল বিভাগে এই তরিকার ৭৫টি মসজিদ রয়েছে বলে তিনি জানান।
ভোলা
ভোলার পাঁচ উপজেলার মানুষ শরীয়তপুরের সুরেশ্বর ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া দরবারের অনুসারী। সোমবার তারা ঈদ উদযাপন করছেন।
প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মুলাই পত্তন গ্রামে। সেখানকার মজনু মিয়ার সামনে সকাল ১০টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে টবগী ইউনিয়নের পঞ্চায়ত বাড়ী জামে মসজিদে ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া জেলা সদরের ইলিশা, তজুমদ্দিনের শিবপুর, সম্ভুপুর, লালমোহন পৌর এলাকার একাংশ ও চরফ্যাশনের জিন্নাগর ইউনিয়নের একাংশসহ ভোলা জেলার ১০টি গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ ঈদ উযদাপন করছেন।
সুরেশ্বর দরবারের মুরিদ মজনু মিয়া জানান, তারা এদেশের একদিন আগে রোজা পালন করছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিবছরই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে থাকেন।
দিনাজপুর
দিনাজপুর সদর, কাহারোল, চিরিরবন্দর, খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সোমবার ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ৫টি প্রায় দুই হাজার পরিবার ঈদ করছে।
দিনাজপুর শহরের ডেফোডিল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ঈদের নামাজে ইমামতি করেছেন, মাওলানা হাফেজ হাবিবুর রহমান। এখানে বেশকিছু মহিলাসহ শতাধিক মানুষ ঈদের নামাজে অংশ নেন।
মাওলানা হাফেজ হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের অনুসারীরা চিরিরবন্দরের নশরতপুর, সাইতাড়ার রাবার ড্যাম এলাকা, কাহারোলের মুকুন্দপুর বীরগঞ্জের কবিরাজহাট এবং গড়েয়াহাটসহ কয়েকটি স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
জামালপুর
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার আট গ্রামের পাঁচ শতাধিক মুসলমান ঈদের নামাজ আদায় করেছেন সোমবার।
সকাল ৯টায় সরিষাবাড়ির উত্তর বলারদিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজে সরিষাবাড়ি উপজেলার ভাটারার পাখাডুবি, পৌসভার পঞ্চপীর, বলারদিয়ার, মহাদানের খাগড়িয়া, উচ্চ গ্রাম, সানাকৈর, সাতপোয়া ইউপির দামেরবাড়ি ও উত্তর বলারড়িয়ার পাঁচ শতাধিক মুসলমান ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।
২০০৫ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এখানে ঈদুল ফিতরের নামাজ হচ্ছে বলে জানান উত্তর বলারদিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঈদুল ফিতর নামাজের ইমাম মো. আজিম উদ্দিন।