ঈদের ছুটি সোমবার থেকে শুরু হলেও সাপ্তাহিক ছুটির পর মাঝে শুধু একদিন রোববার অফিস-আদালত খোলা থাকলেও অনেকেই দিনটিতে ছুটি নিয়ে আগেই রওনা হয়েছেন স্বজনের সান্নিধ্য পেতে।
কোটি মানুষের আবার ঢাকার অর্ধেক ঈদ করতে বাড়ি যান বলে ধারণা করা হয়।
যারা থেকে গেছেন, কাজ সেরে রোববার দুপুরের পরপরেই তাদের ছুটতে দেখা যায় বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনের দিকে।
মহাখালী আন্তঃনগর বাস টার্মিনালে বিকালে গিয়ে দেখা যায় হাজার খানেক মানুষ। এদের বেশির ভাগ টিকিট কেটে অপেক্ষায় রয়েছেন বাসের জন্য।
তবে কেউ কেউ বাস এলেই টিকিট কাটবেন বলে জানান। অনেকেই বলেছেন টিকিটের দাম বেশি নেয়ার কথা।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাস ছেড়ে থাকে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের কিছু বাসও ছাড়ে এই টার্মিনাল থেকে।
সন্ধ্যার আগে টার্নিমাল থেকে ফেরার সময় শত শত মানুষকে হাতে-কাঁধে ব্যাগ নিয়ে এগোতে দেখা যায়।
কাউন্টারের সামনে কোনো ভিড় দেখা যায়নি। কয়েকজন এলে তাদেরকে পরের দিনে টিকিটের কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
“এবার তো লোকজনের চাপই টের পেলাম না। গাড়ি আসছে সময় ধরে, যাচ্ছেও তাই। মাঝখানে সুযোগ পেলে স্পেশাল গাড়িও দিচ্ছি আমরা। তাই ভিড় হওয়ারও সুযোগ নেই,” বলেন কাজল।
আরেকটি পরিবহনের টিকিট মাস্টার দীপক বলেন, সন্ধ্যার দিকে স্টেশনে হঠাৎ ভিড় বাড়তে পারে। কর্মজীবীরা আসতে শুরু করছে। তবে টার্মিনালে পর্যাপ্ত গাড়ি থাকায় ভিড় টেরও পাওয়া যাচ্ছে না।
“গাড়ি অনেক আছে, বরং মানুষ অপেক্ষাকৃত কম এবার। ট্রেনে-লঞ্চে চাপ মনে হয় বেশি। রাস্তাও ক্লিয়ার রয়েছে। শেষ মুহূর্তে চাপও সামাল দেয়া যাবে।”
তবে সোমবারও বিকালে স্টেশনে চাপ পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
এস আর ট্রাভেলসের মতো কয়েকটি কাউন্টারে লেখা রয়েছে, ‘আজকের [রোববারের] টিকিট নেই’। তবে পরদিনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাছে।
জানতে চাইলে মাদারগঞ্জ ট্রান্সপোর্টের নাহিদ বললেন, “গাড়ি এলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে টিকিট দিচ্ছি। এখন আর আগাম টিকিট নয়। লোকজন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছে, টিকিটও কিছুক্ষণের মধ্যে পাচ্ছে।”
“তবে টিকিটের দাম বরাবরের মতো একটু বেশি নিচ্ছি আমরা,” স্বীকার করেন এই পরিবহনকর্মী।
এ যাত্রী বলেন, “স্টেশনে এসেই জানলাম কিছুক্ষণ পরে গাড়ি আসবে। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়েছি। এবার তো ঝামেলা অনেক কম। এসেই টিকিট পাচ্ছি। আশা করি, সময় মতো বাড়ি ফিরব।”
মোমেন-মিজানসহ চার কিশোর যাবে রংপুরে। স্টেশন ঘুরে ১০-১৫ মিনিটের মাথায় টিকিট জোগাড় করে ফিরলেন। তবে দাউদকান্দির কর্মস্থল থেকে ঢাকায় আসতেই ৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়েছে তাদের।
এবারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা বলেন, ঢাকার আশপাশে যানজট ছিল। কিন্তু ঢাকার ভেতরে তেমন যানজট পাইনি।
সাড়ে ৬০০ টাকার টিকিট হাজার টাকায় কিনতে হলেও তা নিয়ে আক্ষেপ নেই এই চারজনের। বরং টিকিট পাওয়াতেই খুশি তারা।
বাস টার্মিনালের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় সাময়িক যানজেটর খবর তারা পেয়েছেন। তবে স্টেশনের আশপাশে ও মহাসড়কে ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে তেমন যানজট হচ্ছে না।
গাবতলী বাস টার্মিনালের একজন টিকিট মাস্টার জুলফিকার জানান, গাবতলীতেও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত যাত্রীদের আনাগোনা ছিল বেশ। টিকিটের সমস্যাও তেমন হচ্ছে না।
রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চলাচলের বাড়তি সুবিধা নিয়ে শেষ সময়ের ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যায় অনেককে।
তবে গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন বাস মালিকদের প্রতি। তাদের অভিযোগ, ঈদে বাড়তি ভাড়া পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কোম্পানির অনেক বাসই যাত্রী নিয়ে ঢাকার আশপাশের জেলায় চলাচল করছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
রোববার সকালে রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম হলেও পর্যাপ্ত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশার দেখা মিলেছে। তবে ভাড়া খানিকটা বেশি।