মিলন হত্যার ৩ বছরেও অভিযোগপত্র হয়নি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কিশোর শামছুদ্দিন মিলন হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে শনিবার। ২০১১ সালে ২৭ জুলাই এই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল লোক।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2014, 05:08 PM
Updated : 26 July 2014, 07:23 PM

এই ঘটনায় মিলনের মায়ের দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেয়া হয়নি আদালতে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ডাকাতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চর কাঁকড়া ইউনিয়নের লোকজন ২৭ জুলাই ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানে ছয় ডাকাতকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে।

কিশোর মিলন ওইদিন সকালে চর ফকিরা গ্রামের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে উপজেলা সদরে যাচ্ছিলেন।

পথে খালাতো বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্য চর কাঁকড়া একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরঘাটে অপেক্ষা করছিলেন মিলন।

এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে। পরে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।

সেখান থেকে কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন এসআই মো. আকরাম শেখের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মিলনকে ডাকাত সাজিয়ে টেকের বাজারে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয়। এরপর লোকজন নিরপরাধ এই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে।

ঘটনার কয়েকদিন পর মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও চিত্রে পুলিশের উপস্থিতিতে এ হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।

এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা শুরু হলে অভিযুক্ত চার পুলিশকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিহত মিলনের মায়ের সঙ্গে দেখা করে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।  

তবে, ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্ত করা আট জনও এরইমধ্যে জামিনে বেরিয়ে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালীর পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত ওসি রফিক উল্লাহ বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে পুলিশ পরিদর্শক, এসআই মো. আকরাম শেখ খুলনা রেঞ্জে, কনস্টেবল আবদুর রহিম চৌমুহনী ও হেমারঞ্জন চাকমা চাটখিল থানায় কর্মরত রয়েছেন।

এদিকে, মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন মিলনের মা কহিনূর বেগম। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে চলছে পরিবারটি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই পর্যন্ত আমি সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। ছেলের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচারও পাচ্ছি না।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার ছেলে হত্যাকারীদের বিচার চাই।”

মিলনের বাবা গিয়াস উদ্দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “তিন বছর পেরিয়ে গেছে কোনো বিচার পায়নি। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা পুলিশ সদস্যরা এখন আবার যে যার চাকরি করছে। আমি কিছু পেলাম না।”

মিলনের বৃদ্ধা দাদী জোহুরা বেগম নতীর খুনিদের বিচার দেখে যেতে পারবেন কিনা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আমার নিরপরাধ নাতিটাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তারা। এরপর পুলিশ তাকে গাড়ি থেকে লোকজনের সামনে ফেলে দেয়। তারা কিল, ঘুষি, লাথি মেরে তাকে হত্যা করে। আমরা বিচার পেলাম না।”

বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষুদ্ধ মিলনের এলাকার লোকজনও।

স্থানীয় বাসিন্দা সেহাগ বলেন, “মিলনের মূল হত্যাকারী হলো পুলিশ। পুলিশের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অথচ পুলিশের কোনো বিচার হলো না। আমরা পুলিশের বিচার চাই, আর কিছু চাই না।”

নিহত মিলনের মামলার আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আলোচিত এই মাশলায় দীর্ঘ তিন বছরেও তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেনি। এজন্য আদালত থেকে বার বার তাগিতও দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামিরাও জামিনে বেরিয়ে এসেছে।

“তদন্ত কর্মকর্তা এবং ঘটনার পারিপাশ্বিকতায় যেহেতু পুলিশ জড়িত সে কারণে মামলার তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে বলে আমারা মনে করি,” বলেন অ্যাডভোকেট গিয়াস।

এ ব্যপারে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ জানান, মিলনের মামলাটিকে স্পর্শকাতর মামলা হিসেবে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং অচিরেই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

এই মামলায় যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় এবং কেউ হয়রানির শিকার না হয় তা দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।