রিকশা আইন নিয়ে তিন সচিব, আইজিপিকে রুল

রিকশা বিষয়ে আইন প্রণয়নে প্রায় দু’বছর আগে দেয়া আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় তিন সচিব, আইজিপি ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2014, 03:12 PM
Updated : 26 July 2014, 03:12 PM

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ সম্প্রতি এই রুল জারি করে।

রুলে হাই কোর্টের রায় লঙ্ঘনের কারণে কেন বিবাদিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি একই অভিযোগে কেন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না, তাও জানাতে বলা হয়।

আদেশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মানজুর হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সি কিউ কে মোসতাক আহমেদ, আইন সচিব আবু সালেহ মো. জহিরুল হক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ফারুক জলিল, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ইব্রাহিম হোসেন খান ও পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ঢাকা জেলা রিকশা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ফজলুর রহমানের করা আবেদনে আদালত এই আদেশ দেয়।

গত ১৫ জুলাই আদালত এই আদেশ দেয়, যার লিখিত অনুলিপি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।

এর আগে বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরীর একক বেঞ্চ ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর রিকশা বিষয়ে একটি রায় দেয়। যাতে ১৪ বিষয় বিবেচনায় রেখে রিকশা বিষয়ক একটি আইন প্রণয়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়। বিবাদিদেরকে এজন্য সময় দেয়া হয় চার মাস।

এছাড়া দুই মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে একটি প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়। ওই আদেশ বাস্তবায়ন না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন ফজলুর রহমান।

দু’বছর আগের ওই রায়ে আদালত বলেছে, বর্তমান সরকার কমিউটার ট্রেন, বিভিন্ন ধরনের বাস রাস্তায় নামানোর মাধ্যমে সরকার গণপরিবহনে একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। তবে গণপরিবহন ব্যবস্থায় সরকার সফল না হওয়া পর‌্যন্ত রাস্তা থেকে রিকশা উঠিয়ে নেয়া ঠিক হবে না।

রায়ে আইন প্রণয়নে যে ১৪টি বিষয় বিবেচনায় রাখতে বলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে- রিকশা চালকদের ব্যবহারযোগ্য হালকা মেশিন দিয়ে রূপান্তর, বাস্তবিক অর্থে রাস্তায় অনুমোদনযোগ্য রিকশার সংখ্যা নির্ধারণ, আইন লঙ্ঘনরোধে রিকশা মালিকদের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠন, নম্বর দিয়ে লাইসেন্স ইস্যু এবং তা প্রদর্শন, রিকশা চালকদের যোগ্যতা: যেমন, ট্রাফিক আইন বিষয়ে জ্ঞান, বয়স সীমা, জীবনমান, শারীরিক সক্ষমতা, অপরাধ রেকর্ড, কাজের নিরাপত্তা ইত্যাদি; চলাচল এলাকার সীমানা নির্ধারণ, একটি থানার সুনির্দিষ্ট এলাকার জন্য নির্দিষ্ট রংয়ের রিকশার ব্যবস্থা।

এতে আরো রয়েছে- চালক ও যাত্রীদের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়া নির্ধারণ, প্রত্যেকটি এলাকায় রিকশা স্টান্ডের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা, মূল রাস্তায় রিকশা চালানোর আলাদা যোগ্যতা নির্ধারণ করা, বৈধ লাইসেন্সধারীকে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া, পথচারীদের জন্য ফুটপাথ মুক্ত রাখা, সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রিকশা মালিক সমিতি ও রিকশা চালক সমিতির নিবন্ধন, আইন অমান্যে চালক ও মালিককে শাস্তি দেয়া।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচল নিশ্চিতে মালিকদের সংগঠন হাই কোর্টে ৫টি রিট হলেও সবগুলো খারিজ হয়ে যায়। আইনগতভাবে সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি করতে পারে না বলে যুক্তি দেখানোর পর এই রায় আসে।

বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে রিকশা চলাচল করতে পারে না। এই সকল সড়কে রিকশা ঢুকলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে প্রায়ই দেখা যায়। তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সম্প্রতি মটরচালিত এক ধরনের রিকশা সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। অনুমতি নাই যুক্তিতে এগুলোর বিরুদ্ধেও প্রশাসনকে মাঝে মাঝেই অভিযান চালায়।