যুক্তরাজ্য সফর সফল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সফর অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2014, 12:26 PM
Updated : 26 July 2014, 01:35 PM

এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে শনিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এই সফরের অন্যতম অর্জন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক এ সফরের অন্যতম একটি বড় অর্জন।

“তিনি (ক্যামেরন) বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের পরিক্ষীত বন্ধু। আমাদের প্রয়োজন সামনের দিকে তাকানো এবং আমার সরকারের সঙ্গে তার সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও নারী উন্নয়ন, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের উদ্যোগ এবং অর্জনের প্রশংসা করেন। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের মূলোৎপাটনে আমাদের সরকারের কঠোর অবস্থানেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে ক্যামেরন বাংলাদেশ সফর করে এই অর্জন নিজ চোখে দেখতে চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ওই বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ডেভিড ক্যামেরন হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইলেকশন যা হয়েছে। উনি (ডেভিড ক্যামেরন) ফরোয়ার্ড লুকিং। উনি সামনে এগোতে চান।যেখানেই যান,সকলের পার্টিশিপেটশনে ইলেকশন হয়নি- এটা তো থাকবেই।

“উনি বলেছেন- যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমরা একসাথে সামনের দিকে এগোতে চাই।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সমস্যা হচ্ছে, কিছু দল আর কিছু মিডিয়া। তারা (যুক্তরাজ্য) তো বলেনি,ইলেকশনে সব দল অংশ নেয়নি। তাহলে তো দাওয়াত দিতো না। টেলিফোন করে দাওয়াত দিতো না।

“আলোচনার সময় যে কোনো বিষয় উঠতেই পারে। কিন্তু পরে যেগুলো বললেন সেগুলো তো তারা (বিএনপি) বলছেন না।”

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখপাত্র অ্যালেস্টার ক্যাম্পবেল এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশের ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন।

“তারা দুজনই উন্মুক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন, যেখানে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে।”

তবে দুই নেতাই ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

ক্যাম্পবেল বলেন, “বাল্যবিয়ে নির্মূলে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে শিশু ও নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন।”

গার্ল সামিটে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমন্ত্রণে গত সোমবার লন্ডন পৌঁছান শেখ হাসিনা, তিন দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন তিনি। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই ছিল যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার প্রথম সফর।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “এ সম্মেলনে আমি ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের বয়সের নীচের  বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করার ঘোষণা দিই। এ সময়ের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের বিয়ে এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনারও ঘোষণা দিই।”

গার্ল সামিটে বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে গৃহীত নানা ধরনের পদক্ষপ ও এক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গার্ল সামিটের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেইক। লেইক প্রধানমন্ত্রীকে ‘সিম্বল অব লিবারেল প্রগ্রেসিভ গ্লোবাল লিডার’ বলে অভিহিত করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়ানে তার সঙ্গে দেখা করে ডিএফআইডির সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।

পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন, কম খরচে জ্বালানি বিকল্প তৈরিতে গবেষণায় কারিগরী সাহায্য প্রদান এবং বাংলাদেশে আরো ব্রিটিশ বিনিয়োগ বাড়াতে ডিএফআইডিকে সহায়তা করার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ব্রিটিশ ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলনে আমার ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং আগামীতেও আমাকে একই ধরনের বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেখতে চান। আমি তাকে জানাই,  ভূমিকা পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

ডগলাস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

হাউজ অব কমন্সের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান ও লেবার পার্টির নেতা কিথ ভাজের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, কেননা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন নারী প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি এমন একজন বিশ্বনেতা, যিনি সারাজীবন কন্যা শিশু ও নারী উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন।

“কিথ বাজ আরো বলেছেন, তিনি অচিরেই ডেভিড ক্যামেরনকে একটি চিঠি লিখতে যাচ্ছেন, যেখানে উল্লেখ থাকবে গার্ল সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহনই ছিল এর সাফল্যের অন্যতম কারণ।”

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি উপস্থিতি ছিলেন।

এছাড়া সংসদ সদস্য রহমত আলী ও ফজলে নুর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনও উপস্থিত ছিলেন।