‘মাঠে দেখা হবে’

বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপের কথা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের সঙ্গে মাঠে দেখা হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2014, 09:37 AM
Updated : 26 July 2014, 03:20 PM

যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে শনিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই হবে। সাংবিধানিকভাবেই হবে।”

ঈদের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট রাজপথের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “মাঠে নামুক না? আমার আওয়ামী লীগ আছে। জনগণ আছে। মাঠের দেখা মাঠে হবে।

“তারা (বিএনপি) ট্রেন মিস করেছে। ট্রেন ছুটে চলে গেছে। আরেকটা ট্রেন আসুক অপেক্ষা করতে হবে।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে দীর্ঘ কথোপকথন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতো ডায়ালগ, ডায়ালগ কেন? ডায়ালগের চেষ্টা তো হয়েছে। তারপরও আপনারা আমাকে অপমানিত করতে চান কেন?”

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও এর শরিক দলগুলোর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা নির্বাচনের নামে কয়েক’শ মানুষ হত্যা করেছে। এই আন্দোলন তারা করবে? আর সরকারে থেকে আমরা তা বসে বসে দেখবো?”

নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে ‘বিএনপির’র ভুল’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন তো হয়ে গেছে। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এটা তো তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত জাতি কেন দেবে? সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার দায়ভার তাদের দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “যেভাবেই হোক নির্বাচন হয়েছে। জনগণ মেনে নিয়েছে। ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে।”

এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী; জানতে চান- “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান? নাকি তাদের বিচার না হোক- সেটা চান?”  

শেখ হাসিনা বলেন, “যারা আমার বাবা-মা’র হত্যাকারী। আমার চোখের সামনে আমার নেতা-কর্মীর সারি সারি লাশ পড়ে আছে। আমি জানি কারা করেছে। আমি পারি তাদের সঙ্গে বসতে?”

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আমার ওপর এতো অত্যাচার কেন? আমার ওপর এতো টর্চার কেন? তারা আমার বাবা-মা’কে হত্যা করেছে। তাদের সঙ্গে গলায় গলা মিলিয়ে কথা বলতে হবে?”

সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলা ভিশনের হেড অফ নিউজ মোস্তফা ফিরোজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন: ব্রিটেন সফরের মধ্য দিয়ে আপনি কি নির্বাচন প্রশ্নে তাগিদ অনুভব করছেন সংসদের বাইরে যে প্রধান বিরোধী দল আছে তাদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা দরকার? ঈদের পার তারা আন্দোলন করবে। এটা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। সেই আন্দোলনে সরকার কোনো বাধা দেবে কিনা? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দেবে কিনা?

তখন মোস্তফা ফিরোজকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি চাচ্ছেন যে, এই আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তাদেরকে সহায়তা করুক। যাতে আরো বেশি করে বাস পোড়াতে পারে, ট্রেন পোড়াতে পারে, মানুষ খুন করতে পারে। আপনার প্রশ্নে সেটাই মনে হলো। আপনার প্রশ্নে এটাই মনে হলো, যারা আন্দোলন করবে তাদের সাহায্য করতে হবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। একটা রায় কার্যকর হয়েছে। বিচার বিভাগ রায় দিলেই আমরা বাস্তবায়ন করবো। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালনের সময়ে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) প্রেসিডেন্ট আহম্মেদ মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তারেক রহমান সেখানে ছিলেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা তো তাদেরকেই (আইডিবি) প্রশ্ন করতে হবে। একজন ফেরারি আসামির সঙ্গে দেখা করে তারা কতোটা স্বস্তি বোধ করলো?”

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এমনিতে তো কেস রয়েই গেছে। গ্রেনেড হামলা, মানিলন্ডারিং মামলা চলছে। আইন তার আপন গতিতে চলবে। এখন একটু গতি পাবে।”

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এছাড়া সাংসদ মো. রহমত আলী ও ফজলে নূর তাপস এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন।