সোহাগপুর গণহত্যা দিবস

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সোহাগপুর গণহত্যা দিবস ২৫ জুলাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী সোহাগপুর গ্রামে হত্যা করে ১৮৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে, ধর্ষণ করে বহু নারীকে। ওই হত্যাকাণ্ডে বিধবা হন ৪০ জন নারী। তখন থেকেই গ্রামটির নাম হয় বিধবা পল্লী।

শেরপুর প্রতিনিধিআব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2014, 11:32 AM
Updated : 2 Nov 2014, 07:58 PM

সেদিনের সেই হত্যাকাণ্ডের ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান সোহাগপুরের স্বামী হারা নারীরাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সেদিনের সেই শহীদদের স্মরণে এখানে সরকারিভাবে কোনো কর্মসূচি নেই।

তবে, সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতি নিজেদের উদ্যোগে চাঁদা তুলে স্থানীয়ভাবে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে।

এজন্য সমিতির ৬১ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।

শুক্রবারের এ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এলাকার চারটি মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

শহীদ পরিবারের সদস্য জালাল উদ্দিনসহ বিধবা নুরেমান বেওয়া, সমলা বেওয়া, জরিতন বেওয়া ও জবেদা বেওয়া জানান, শেরপুর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার  দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রাম।

১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই সকালে গ্রামবাসীরা প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে এবং এলাকার লোকজন মুক্তি বাহিনীকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছেন এমন কারণ দেখিয়ে শেরপুরের চিহ্নিত কুখ্যাত রাজাকার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের নির্দেশে গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।

তারা আরো জানান, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নির্বচার গুলিতে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তারা। গুলিতে প্রাণ হারান ১৮৭ জন নারী-পুরুষ-শিশু। জ্বালিয়ে দেয়া হয় ঘরবাড়ি। ধর্ষিতা হন অনেক নারী।

ওইদিনের হত্যাযজ্ঞে বিধবা হন ৪০ নারী, যাদের আট জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।                                     

শহীদ পরিবারের এই সদস্যরা আরো জানান, বেঁচে থাকা বিধবা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সাহায্যের জন্যে বিগত সেনা শাসিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সোহাগপুর গ্রামে একটি মাসরুম প্রকল্প ও কৃষি কাজের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে দেয়া হয়েছিল।

এ থেকে বিধবা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা কিছুদিন আর্থিক সহয়োগিতা পেলেও বর্তমানে প্রকল্প দুটির কোনো অস্তিত্ব নেই। মাসরুম প্রকল্পের ঘরটিও বিলীন হয়ে গেছে। কৃষি যন্ত্রপাতি স্যালো মেশিন, ট্রাক্টর, থেচার মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও এখন আর নেই।

বর্তমানে তিনমাস অন্তর নয়শ  টাকা করে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা এবং ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে তিন হাজার টাকা করে পাচ্ছেন বিধবারা।

বিধবারা সরকারের কাছে তাদের ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

সেইসঙ্গে সোহাগপুরের শহীদদের নাম নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ এলাকাটির জমি ব্যক্তিমালিকানা থেকে সরকারের নামে কিংবা বিধবাদের নামে সংরক্ষণ করারও দাবি জানান। তা করা না হলে স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় প্রবেশের রাস্তা ও গণকবরসহ সবকিছুরই অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে সেদিনের সেই ভয়াবহতা স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেননি সোহাগপুরের স্বজনহারা মানুষরা। মানবতা বিরোধী সেই অপরাধে জড়িত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান বিধবা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।