বেবী মওদুদ আর নেই

প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক, নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ আর নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2014, 09:00 AM
Updated : 26 July 2014, 10:27 AM

বেশ কিছুদিন ক্যান্সারে ভুগে শুক্রবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।   

বেবী মওদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “সৎ, সাহসী এবং অসম্ভব স্নেহময়ী একজন মানুষকে আজ আমরা হারালাম।”

বিকালে বেবী মওদুদের মৃত্যুর খবরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই বান্ধবীর পাশে শেষবারের মতো কিছুক্ষণ সময় কাটান তিনি।

এ সময় বেবী মওদুদের দুই ছেলে রবিউল হাসান অভী ও শফিউল হাসান দীপ্তকে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন  প্রধানমন্ত্রী।

এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার মৃত্যুতে আমি আমার দীর্ঘদিনের একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছি”।

 

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোক বার্তায় বলেন, “বেবী মওদুদ ছিলেন এক সৎ ও সাহসী সাংবাদিক। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নির্ভীক সংবাদকর্মীকে হারালো।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বিকালে হাসপাতাল থেকে বেবী মওদুদের মরদেহ ধানমন্ডিতে তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন  অঙ্গনে তার সহকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা সেখানে জড়ো হন শেষবারের মতো তাকে দেখতে।

বাসভবনের সামনেই এশার নামাজের ঠিক আগে পারিবারিকভাবে বেবী মওদুদের জানাজা হয়। এরপর ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে এশার নামাজের পর হয় আরেকটি জানাজা।  সেখান থেকে তার কফিন নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদ্য, সংসদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বেবী মওদুদের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।   

রাতেই বনানী কবরস্থানে স্বামী অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলীর কবর তাকে দাফন করা হয়।

বেবী মওদুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, কলকাতায়। তার বাবা আবদুল মওদুদ ছিলেন একজন বিচারপতি। আর মায়ের নাম হেদায়েতুন নেসা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতায় জড়িত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, দৈনিক ইত্তেফাক, বাসস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার দিনগুলোতেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বেবী মওদুদ।

১৯৭১ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার আগে ১৯৬৭-৬৮ সময়ে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন বেবী মওদুদ।

নবম জাতীয় সংসদে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৩ সালের অক্টোবরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যাত্রা শুরুর সাত বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বেবী মওদুদ।

 

আনুষ্ঠানিক নাম এ এন মাহফুজা খাতুন হলেও সবাই তাকে চিনতেন বেবী মওদুদ নামে। সাদামাটা পোশাকের স্নেহময়ী এই নারী সহকর্মীদের কাছে ছিলেন বেবী আপা।      

সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখিতে যুক্ত ছিলেন বেবী মওদুদ। লিখেছেন শিশু-কিশোরদের জন্যও। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সম্পাদনাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

তার শিশুতোষ বইয়ের মধ্যে রয়েছে দীপ্তর জন্য ভালোবাসা, টুনুর হারিয়ে যাওয়া, শান্তর আনন্দ, এক যে ছিল আনু, মুক্তিযোদ্ধা মাণিক, আবু আর বাবু এবং কিশোর সাহিত্য সমগ্র।

এছাড়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের নারী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, নিভৃত যতনে, রোকেয়া টাফ, আমার রোকেয়া, চিরন্তন প্রতিকৃতি রোকেয়া, শেখ মুজিবের ছেলেবেলা, মনে মনে (ছোট গল্প), দুঃখ-কষ্ট-ভালোবাসা (উপন্যাস), সষি পুষি টুষি (ছড়া) ও পাকিস্তানে বাংলাদেশের নারী পাচার তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা।