শান্তি মিশনে বাংলাদেশ: নেতিবাচক প্রচারে এসিএইচআর

জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে এশিয়ান সেন্টার অফ হিউম্যান রাইটস (এসিএইচআর) নামের একটি সংগঠন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2014, 01:48 PM
Updated : 24 July 2014, 03:59 PM

এসিএইচআর এর আগে ডানঘেঁষা অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের নেতিবাচক প্রচারে দেখা গেছে।

সংস্থাটি বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ: সেন্ডিং ডেথ স্কোয়াড টু কিপ দ্য ইউএন’স পিস’ শিরোনামে তাদের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, এ বিষয়ে এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।

আর এমন এক সময়ে এসিএইচআর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল, যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ভে ল্যাডসাউ বাংলাদেশ সফর করছেন।   

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ যে সেনা সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠায়, তাদের মধ্যে অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং র‌্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে র‌্যাবকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে। 

এসিএইচআর- এর দাবি, বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ১৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ৪৬৪ জনকে আটক, ৩৭৪টি নির্যাতন, জোর করে উচ্ছেদের ২৮৫টি ঘটনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ১ হাজার ৭০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত।   

একইসঙ্গে ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সন্দেহভাজন অন্তত ৭০ জনকে হেফাজতে নিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

এছাড়া র‌্যাব সদস্যরা ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ‘ক্রসফায়ারের নামে’ ৭৭৬ জনকে হত্যা করেছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যে বাহিনীর ২০৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৮৩ জনই সেনাবাহিনীর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা’ এই সেনা সদস্যদের একটি বড় অংশকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে পাঠিয়েছে।

এসিএইচআর- এর পরিচালক সুহাস চাকমা বলেন, “র‌্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যা ধামাচাপা দেয়ার একটি নগ্ন চেষ্টা হলো এই ক্রসফায়ার। ২০০৪ সালে এই বাহিনী গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধী চক্র এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে র‌্যাবের অসংখ্য ক্রসফায়ারের কথা বলা হলেও তাতে এই বাহিনীর একজন সদস্যও মারা যাননি।”    

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যুক্ত হতে পারা যথেষ্ট লোভনীয় একটি সুযোগ, কেননা সেখানে একজন সেনা কর্মকর্তা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বাইরেও প্রতি মাসে ২ হাজার ২০০ ডলার করে পান। আর একজন সৈনিক সেখানে পান ১ হাজার ১০০ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশে একজন সেনা কর্মকর্তার বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা (২০০ ডলারের মতো) এবং সাধারণ সৈনিক পান ৭ হাজার ৭১৭ টাকা ( ১০০ ডলার)।

অবশ্য সেনাবাহিনীর বেতন কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের বেতন  এসিএইচআর- এর দাবির তুলনায় বেশি। 

শন্তি মিশনে যোগ দেয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই আসেন সেনাবাহিনী থেকে। বাকিরা পুলিশ, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্য।

শান্তি মিশনে যাওয়ার সুযোগ থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ‘বঞ্চিত’ করাও ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

ওই বছর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় রক্তাক্ত বিদ্রোহের সেই ঘটনায় নিহত ৭৪ জনের মধ্যে ৫৭ জনই ছিলেন সেনা কর্মকর্তা।  

এসিএইচআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় বিডিআর সদস্যদের অভিযোগের নিষ্পত্তি না করে জনগণকে জানানো হয় যে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নিতে আপত্তি তুলেছে।

সুহাস চাকমা বলেন, “এটাও ছিল একটি নির্জলা মিথ্যা।… বাংলাদেশ সরকারই শান্তি মিশনে বিডিআর ( পরে যে বাহিনীর নাম হয়েছে বিজিবি) সদস্যদের না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, কেননা পিলখানার সেই বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘের চাকরি করায়ত্ত করার পেছনে সেনাবাহিনীর বিশাল স্বার্থের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ৭ শতাংশ সদস্য জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কোনো সময়ই এই হারের নড়চড় হয়নি।     

বাংলাদেশের ওপর ‘সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগতভাবে বাড়াতে’ জাতিসংঘও অবদান রেখে আসছে বলে মন্তব্য করা হয় এই প্রতিবেদনে।