লালবাগের সাত খুন: ১২ আসামির সবার সাজা বহাল

রাজধানীর লালবাগে বিশ বছর আগের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড, নয় জনের যাবজ্জীবন এবং একজনের দশ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2014, 07:52 AM
Updated : 24 July 2014, 11:35 AM

আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন।

এ মামলায় জামিনে থাকা বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ মিয়াসহ তিন আসামিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

২০০৮ সালের ৭ মে ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ টি এম মুসা এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মামলার রায়ে আব্দুস সালাম ওরফে মতি এবং জাহিদ হাসান ওরফে নাটকা বাবু নামের দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। সেই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

এছাড়া আব্দুল আলিম ওরফে শাহীন, মুনির পাটোয়ারী, মাহতাব হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ওরফে আন্ডা, আমির হোসেন, দিল মোহাম্মদ মতি, কালু ওরফে কাইল্যা, মোজাম্মেল ও মুন্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

৩০৭ ধারায় এই আসামিদের আরো ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০হাজার টাকা জরিমানা, অনদায়ে আরো এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

৩০৭ ধারায় এই দণ্ড দেয়া হয় ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশনার পদের পরাজিত প্রার্থী আব্দুল আজিজকেও। দণ্ডিত বাকি সবাই তার কর্মী-সমর্থক।

অন্য একটি ধারায় আজিজসহ যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ২ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আসামিদের করা আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে হাই কোর্ট বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ড বহাল রাখে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির জরিমানা মওকুফ করা হয়।

আসামিদের মধ্যে দিল মোহাম্মদ ও মোজাম্মেল পলাতক রয়েছেন। রায়ে তাদেরকে গ্রেপ্তারের আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

জামিনে থাকা আজিজ, মুনির পাটোয়ারী ও মাহতাব হোসেনকে রায় প্রকাশের ত্রিশ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলেছে হাই কোর্ট।

মামলার নথিতে বলা হয়, ১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হুমায়ুন কবির বিজয়ী হন।পরদিন তার সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করলে লালবাগের নবাবগঞ্জ রোডে পরাজিত প্রার্থী বিএনপি সমর্থিত আব্দুল আজিজ মিয়ার সমর্থকরা হামলা চালায়।

ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ছয় জন নিহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো একজন।

সেই সময়ে এ ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হুমায়ুন কবির ঘটনার পরদিন আব্দুল আজিজসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যা ‘সেভেন মার্ডার কেইস’ নামে পরিচিতি পায়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ২০০৮ সালে রায় ঘোষণা করে বিচারিক আদালত।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারিক আদালত আট জনকে এবং বিচার চলাকালে মৃত্যুবরণ করায় অপর একজনকে খালাস দেয়। সেই রায়ও বহাল রয়েছে।

আসামিদের মধ্যে যাবজ্জীবন প্রাপ্ত দুই আসামি এখনো পলাতক। এছাড়া আজিজসহ তিনজন জামিনে এবং বাকিরা কারাগারে রয়েছেন।