মহাসড়কের চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই অংশের ৬৬ কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সংস্কারের কাজ বিশেষ করে গর্ত ভরাট চললেও বৃষ্টির কারণে তা উঠে গিয়ে পুনরায় খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে গুরুত্বপুর্ণ এ মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
সড়কের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের কয়েকটি স্থানে সীমিত যানজটও দেখা গেছে। তবে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ এখনো না পড়ায় তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীদের মতে, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে মহাসড়কের চট্টগ্রাম জেলার অংশে যে ক্ষতি হয়েছিল এখন তা সে পর্যায়ে নেই। সেই সময় সড়কের বিভিন্ন খানাখন্দ অনেকটাই সারিয়ে তোলা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সড়কের কিছু অংশে নতুন করে গর্ত সৃষ্টি হলেও কোনোমতে ইট-বালি ফেলে তা দ্রুত ভরাট করে ফেলা হচ্ছে।
জোড়াতালি দিয়ে এভাবে মেরামত চললেও বৃষ্টি হলে তা আবার অনুপযোগী হওয়ার আশঙ্কা সড়ক বিভাগের কর্মীদের মধ্যেও রয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই অংশে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের খানাখন্দ ভরাট করা হলেও বৃষ্টির পানিতে পাথর ও বিটুমিন উঠে নতুন করে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের কদম রসুল, মাদাম বিবিরহাট, কুমিরা, বাড়বকুণ্ড, দক্ষিণ বাইপাস, দারোগারহাট, বারৈয়াঢালাসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার গর্ত ভরাটের কাজ চলতে দেখা যায়।
আবার কিছু কিছু স্থানে দুই-একদিন আগে গর্ত ভরাট করা হলেও বৃষ্টির পর গাড়ির চাকার সঙ্গে উঠে গেছে পাথর ও বিটুমিন।
ওই সড়কে চলাচলকারী বাস চালক মো. ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাস্তায় জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হলেও তা দুই এক দিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কাদা জমে যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামে মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটারের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সীতাকুণ্ড সদরের দক্ষিণ বাইপাস ও বড় দারোগারহাট এলাকায়। তবে সেখানেও চলছে মেরামতের কাজ।
স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টিতে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়া ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেইনে সম্প্রসারণের কাজ চলায় কিছু কিছু এলাকায় ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
মহাসড়ক সংস্কারের সাথে যুক্ত শ্রমিকরা জানান, বিভিন্ন জায়গায় গর্ত ভরাট তাদের নিয়মিত কাজের অংশ। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে গর্ত ভরাট করতে হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে বড় দারোগারহাট এলাকায় দেখা যায় রাস্তার গর্তে পড়ে উল্টে আছে মসলাবোঝাই একটি ট্রাক।
সেখানে দায়িত্বরত মহাসড়ক পুলিশের কুমিরা ফাঁড়ির এসআই মো. আলমগীর বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মহাসড়কের অবস্থা ‘অনেকটা ভাল’। বিভিন্ন পয়েন্টে চার লেইনের রাস্তা খুলে দেয়ায় যানজট সমস্যা এবার ‘অনেকটা লাঘব’ হবে।
তারপরও ‘চালকদের অসতর্কতার কারণে’ কখনো কখনো রাস্তার গর্তে গাড়ি উল্টে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যানজট হলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে এসআই আলমগীর বলেন, তিনটি পুলিশ ফাঁড়িতে রেকার রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
আব্দুর রহমান নামে এক বাসচালক বলেন, সীতাকুণ্ড বাইপাস, বড় দারোগারহাট ও বারৈয়াঢালা এলাকায় যান চলাচলে বেশি সমস্যা হচ্ছে।
এর মধ্যে দক্ষিণ বাইপাস ও বড় দারোগারহাট এলাকায় গর্তের পাশাপাশি কাদা জমে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
এছাড়া সড়কের মিরসরাইয়ে নিজামপুর কলেজ, ফকিরহাট ও মিঠাছড়া এলাকায় বৃষ্টিতে নতুন করে কিছু খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই পর্যন্ত অংশ চার লেইন প্রকল্পের অধীনে। এই অংশের মেরামতের কাজ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পরিবর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা করছেন।
চার লেইন প্রকল্পের চট্টগ্রাম অংশের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী অরুণ আলো চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গর্ত মেরামতের পর বৃষ্টির কারণে বিটুমিন-ইট উঠে যাচ্ছে ঠিকই। তবে কর্মীরা দ্রুত তা সারানোর চেষ্টা করছেন।
“গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা তা সারিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছি। যে কয়েকটি স্থানে সমস্যা রয়ে গেছে তা বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।”
প্রকৌশলী অরুণ বলেন, মহাসড়কের যেসব অংশে নতুন করে খানাখন্দ হচ্ছে সেগুলো তাৎক্ষণিক না সারালে বড় ক্ষত তৈরি করতে পারে। এ কারণে বৃষ্টি হলেও আপাতত বিটুমিন না দিয়ে ইট-বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।