এর সুযোগে রাজধানী থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দোকানপাটে বিক্রি হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গুঁড়ো দুধ ও ফর্মুলা ফুড হিসেবে পরিচিত খাবার।
জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধই শিশুর একমাত্র পূর্ণাঙ্গ খাবার হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পুষ্টিগুণ সে পেয়ে থাকে মায়ের দুধ থেকেই।
ফলে শিশুর সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে জন্মের পর থেকেই সে যাতে শুধু মায়ের দুধ গ্রহণ করে,তা নিশ্চিতে উদ্যোগ রয়েছে সারা বিশ্বেই। বাংলাদেশেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন থাকলেও আইনটির বিষয়ে জানা নেই অধিকাংশ মানুষেরই।
আইন সম্পর্কে না জেনেই দোকানে বিকল্প গুঁড়ো দুধ ও ফর্মুলাগুলো বিক্রি করছেন সাধারণ দোকানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুপার শপগুলো।
এমনকি শিশুর মা-বাবাসহ অভিভাবকরাও সচেতন নন শিশু খাদ্য হিসেবে মায়ের দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে।
তারাও মায়ের দুধের চেয়ে এসব বিকল্প খাদ্যের উপর নির্ভর করছেন এবং এগুলোকেই শ্রেয় মনে করে কিনছেন অহরহ।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের সর্বশেষ ২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী,বাংলাদেশে শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং-ইবিএফ) হার ৬৪ শতাংশ।
সারা বিশ্বে শিশুদের সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে ১৯৮১ সালে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে,যা ‘ইন্টারন্যাশনাল কোড অব মার্কেটিং অব ব্রেস্টমিল্ক সাবস্টিটিউটস’ নামে পরিচিত। এরপর ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য (বিপণনের নীতিমালা) আইন’ করা হয়।
২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর এ আইনটি সংশোধন করা হয়। তবে সংশোধিত আইনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ১৯৮৪ সালের আইনটি রহিত করা হয়েছে এই আইনেই। ফলে বর্তমানে দেশে বিকল্প শিশুখাদ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কোনো আইনেরই কার্যকারিতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
এ ধরনের পণ্য বিশেষভাবে প্রদর্শনের জন্য দোকানের মালিকপক্ষের সঙ্গে উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের চুক্তির কথাও জানা যায় বিশেষ অনুসন্ধানে।
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার একটি জেনারেল স্টোরের মালিক জুনায়েদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,নেসলে কোম্পানি নিজেদের পণ্য তার দোকানের একটি বিশেষ অংশে প্রদর্শনের জন্য তাকে মাস প্রতি টাকা দিয়ে থাকে। প্রতি মাসে পণ্য সরবরাহকারীর মাধ্যমে ওই টাকা পৌঁছে যায় তার হাতে।
এভাবে এ জাতীয় পণ্য প্রদর্শনের ফলে তার পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে জানালে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো আইনের কথা তার জানা নেই। এ বিষয়ে এর আগে কেউ তাকে কিছু বলেনি।
শুধু উপজেলা পর্যায়ের দোকান মালিক জুনায়েদই নন,এ আইন সম্পর্কে জানেন না দেশের বড় ব্ড় সুপার শপগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও।
তার প্রতিষ্ঠানেরও একটি মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম বলেননি তিনি।
এ বিষয়ে বিকল্প শিশুখাদ্য বিপণন বিষয়ক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান জাতীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনিস্টিটিউটের (আইপিএইচএন) প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো.মওদুদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,২০১৩ সালের সংশোধিত আইনে এর আগের সব আইন রহিত হওয়ায় বর্তমানে এ আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশেষ কোনো কর্তৃপক্ষের অধীনে নেই।
আইপিএইচএন মূলত এ ধরনের বিকল্প খাদ্য বিপণনের জন্য লাইসেন্স এবং বিপণনের সামগ্রী ও বিষয়বস্তুসর অনুমোদন দিয়ে থাকে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করে।
আইন লংঘনে ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না।”
তবে খুব শিগগিরই এই নীতিমালা চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।