সাগর-রুনি খুন: তানভীরের জামিনের সিদ্ধান্ত পুলিশ প্রতিবেদন দেখে

পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর মো. তানভীর রহমানের জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে হাই কোর্ট, ‍যিনি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2014, 10:25 AM
Updated : 22 July 2014, 10:25 AM

সোমবার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ ২ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করে দেয়।

মানবাধিকার কমিশনের করা জামিনের আবেদনে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানিতে ফাওজিয়া করিম বলেন, তানভীরকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মামলার বিচার কাজও চলছে না। এই অবস্থায় জামিন পাওয়া তার অধিকার।

অন্যদিকে মামলাটিকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মামলা তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় এই আসামিকে জামিন দেয়া ঠিক হবে না।

শুনানিতে আইনজীবী জানান, আগামী ১৩ অগাস্ট এই মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে দাখিল হওয়ার কথা রয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানির পর আদালত বলেন, পুলিশ প্রতিবেদন আসুক। জামিন আবেদন ২ সেপ্টেম্বর আবার শুনানির জন্য আসবে। প্রতিবেদনে কী আছে, দেখে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।”

এর আগে তানভীরের জামিন চেয়ে গত ১৩ জুলাই রিট আবেদন করেছিল মানবাধিকার কমিশন। ওইদিন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে শুনানিও হয়।

হাই কোর্ট ও বিচারিক আদালতে বারবার জামিন আবেদন করে জামিন না পাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে জামিন চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী এই আবেদন করা হয়। ওই আদালতের পরামর্শেই জামিনের এই আবেদন করা হয়। রিট আবেদনটি ওই আদালতে বিচারাধীন।

ওইদিন আবেদনকারীর আইনজীবী ফাওজিয়া করিম সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারিক আদালত গত ২৬ জুন আমাদের জামিন আবেদন খারিজ করেছে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা এখন হাই কোর্টের জামিনের বেঞ্চে আবেদন করব। জামিন না পেলে সেই আদেশের অনুলিপি নিয়ে এই আদালতে আসব।”

সাগর-রুনির কথিত পারিবারিক বন্ধু তানভীর রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুলের ডেপুটি ম্যানেজার ছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বিচারক তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।

তার আইনজীবীর দাবি, তানভীরকে ওই বছরের ১ অক্টোবর আটক করা হলেও আদালতে হাজির করা হয় ১০ দিন পর।

আটক হওয়ার পর তানভীর বিচারিক আদালতে জামিনের আবেদন করেন। তা খারিজ হয়ে গেলে হাই কোর্টে যান। ২০১৩ সালের ২ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ আবেদনটি ‘উপস্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দেয়।

পরে একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ স্বল্প সময়ের জন্য জামিন দিয়ে তা নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। আদেশের অনুলিপি না পাওয়ায় সেই আদেশে কারাগার থেকে বের হতে পারেননি তানভীর। এরপর নিয়মিত বেঞ্চও তার জামিন বাড়ায়নি।

বিচারিক আদালত তার জামিন আবেদন আবারো নাকচ করলে তার আইনজীবীরা ফের হাই কোর্টে আসেন এবং গত এপ্রিলে তা আবারো উপস্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়।

ছেলেকে ‘বিনা-বিচারে’ আটকে রাখার অভিযোগ এনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তানভীরের বাবা মাহবুবুর রহমান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়েই কমিশন ও এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রিট আবেদন করেন।

ফাওজিয়া করিম বলেন, বাংলাদেশের আদালতে এ ধরনের আদেশের দৃষ্টান্ত না থাকলেও ভারতীয় আদালতে বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।

“আমরা বলেছি, তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। এফআইআরে তার নাম নেই। রিমান্ডে নেয়ার পরও তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপরও তিনি জামিন পাচ্ছেন না।”

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি।

হত্যারহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাই কোর্টের নির্দেশেই ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি পুলিশ থেকে র‌্যাবে স্থানান্তর করা হয়।

র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর সন্দেহভাজন ১৬ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। এছাড়া আলামত হিসেবে জব্দকৃত ছুরি ও পোশাকের নমুনাও পাঠানো হয়। কিন্তু তাতেও খুনি সনাক্ত করা যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের এক বছর আট মাস পর ঘটনায় ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এর মধ্যে পাঁচজনই চিকিৎসক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি।