আলো পেল না সমন্বিত ভর্তি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবারো সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে ভোগান্তির সঙ্গে খরচও কমছে না উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।

শহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2014, 02:20 AM
Updated : 22 July 2014, 02:21 AM

এ বছর থেকে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সরকারের ঘোষণা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এনিয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়নি।

অবশ্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে না পেরে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ‘বড়’ বিশ্ববিদ্যালগুলোকে দায়ী করেছে। তারা বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় চাপও দেয়া যায় না।

তবে দৃশ্যত শাহজালাল এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগের পর এনিয়ে স্থানীয়দের আন্দোলনকেই বেশি ‘ভয়’ পাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’।

এবার এইচএসসিতে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। আগামী মাসের প্রথম দিকে ফল ঘোষণার পরে উত্তীর্ণরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজেদের মতো করে ইতোমধ্যেই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে।

বর্তমানে মেডিকেল কলেজগুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে অর্থাৎ, একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।

গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্যোগ নিলে আমরা সব ধরনের সমর্থন দেব।”

অপরদিকে ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলছেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে চাইলেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তা চায় না।

“বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করায় আমরা তাদের জোরও করতে পারি না,” বলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের প্রধান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও মনে করেন সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও খরচ কমবে।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল চায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। তবে সমন্বিত পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলতে পারে।”

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে বলেও মনে করেন অধ্যাপক সিদ্দিক।

আর বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন বলেন, “সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গত বছর সিলেটে আন্দোলন হওয়ায় সরকার ও আমরা আর রিস্ক নিতে চাই না।”

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ শিক্ষকই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন সিস্টেম চালু করতে পুশিং দরকার।”

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ না নেয়ায় সদ্য উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও খানিকটা ক্ষুব্ধ।

রানা মুহম্মদ মাসুম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “কয়েক বছর ধরেই শুনতে পাচ্ছিলাম সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে কিন্তু এবারো হলো না।”

তার প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের একটু সুবিধা হোক এটা দেখার কি কেউই নেই?

সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। এতে ভোগান্তি ও খরচ কমে যাবে।

বর্তমানে ঘরে বসেই অনলাইন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম পূরণ ও প্রবেশপত্র সংগ্রহ করা যায়।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত হলে একটি ফরম পূরণ করেই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে।

এতে কোচিং ‘বাণিজ্য’ কমে যাবে বলেই সবার ধারণা।