মহাসড়কে ‘জোড়াতালির’ সংস্কার 

বৃষ্টিতে খোয়া-বালি উঠে গিয়ে রাস্তার কোথাও হা করে আছে গর্ত। সম্প্রসারণ কাজের খোঁড়াখুঁড়ি আর ইট বালির স্তূপের কারণে ভবিষ্যতের চার লেইনের সড়কে চলাচলের জন্য ফাঁকা আছে কেবল দেড় লেইনের মতো। 

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 03:47 PM
Updated : 21 July 2014, 05:55 PM

যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশের ৮০ শতাংশ সড়কের মেরমত শেষ হয়ে যাওয়ার দাবি করলেও রোজার ঈদের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই চিত্র যাত্রীদের ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রার আশ্বাস দিতে পারছে না।      

গত ১১ জুলাই এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় রাজধানীসহ সারাদেশের সব সড়ক-মহাসড়ক ২০ জুলাইয়ের মধ্যে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দেন যোগাযোগমন্ত্রী কাদের।

ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, সারা দেশে ‘২০ পার্সেন্ট’ কাজ বাকি আছে, যা ‘দুই-এক’ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

তবে সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি চোখে পড়েনি।     

ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, রাস্তার মাঝ বরাবর স্তূপ করে রাখা হয়েছে সড়ক সংস্কারের সরঞ্জাম। ফলে সরু হয়ে গেছে যান চলাচলের রাস্তা।

সালনা ও ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কাছেও সড়কের চিত্র একই রকম।  

বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বহু জায়গায় খোয়া-বালির মিশ্রণ সরে গেছে। ফলে রাস্তা হয়ে উঠেছে এবড়ো থেবড়ো।

মহাসড়কের তেলিপাড়া, সালনা, রাজেন্দ্রপুর, হোতাপাড়া এলাকায় মহাসড়কে মুখ ব্যাদান করে আছে ছোট বড় খানা-খন্দ। বহু জায়গায় জমে আছে কাদা-পানি।

তবে হ্যাঁ, মেরামতও হচ্ছে। ইট, সুরকি, পাথর আর বালি মিশিয়ে ঝটপট গর্ত বুজিয়ে বার কয়েক রোলার চালিয়ে চলছে ‘জোড়াতালির সংস্কার’। এরপর সামান্য বৃষ্টিতেই সড়ক ফিরে যাচ্ছে আগের চেহারায়।

আবহাওয়ার অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, জুলাই মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে।

ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মহাসড়ক চার লেনে সম্প্রসারণের কাজ চলায় ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এলাকার কোনো কোনো অংশ এতোটাই সরু হয়ে এসেছে যে পাশাপশি দুটি গাড়ি চলতে গেলেও জট লেগে যাচ্ছে।

সালনা এলাকায় ট্রাক ড্রাইভার আব্দুল মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাসড়কের যা অবস্থা, তাতে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো যায় না। রাস্তার কিছু কিছু জায়গা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগে। এতে গাড়ির যেমন ক্ষতি হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে।”

গাজীপুরের বাসিন্দা আকরাম হোসেনকে পেশাগত কারণে এই মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল করতে হয়। রাস্তার যা অবস্থা, তাতে আগামী এক সপ্তাহে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন না। আর সেক্ষেত্রে ঈদের আগে আগে সড়কে গাড়ির চাপ বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলেই তার আশঙ্কা।

আকরাম বলেন, “রাস্তা এতো খারাপ, এমনিতেই এক ঘণ্টার রাস্তা ৫-৬ ঘণ্টা লাগে। ঈদের সময় মানুষ কীভাবে যাবে?”

ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আকরামের এই প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছিল গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিবুল হকের কাছে। তবে মহাসড়কের কোনো দায় নিতে রাজি হননি তিনি।

“গাজীপুর এলাকার সবগুলো সড়ক ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আমার আওতাধীন নয়। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।”

এ বিষয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উপ পরিচালক মো. মনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সোমবার রাজধানীর মগবাজার এলাকার যানজট পরিস্থিতি পরিদর্শনের সময় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও মহাসড়কের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন।

আরো দুই এক দিন সময় চেয়ে তিনি বলেন, “সাত দিনের টার্গেটে সব কাজ শেষ হবে তা ঠিক নয়। কেউ তো আর বসে নেই। আপাতত জোড়াতালি দিয়েই চলতে হবে।”