রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজম ষড়যন্ত্রের শিকার: আলোচিত দূতাবাসকর্মী

এক কর্মীকে আটকে কাজ করানোর অভিযোগ ওঠার পর অব্যবস্থাপনার কারণ দেখিয়ে লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গাউসুল আজম সরকারকে দেশে ডেকে পাঠানো হলেও ঘটনার শিকার ওই কর্মীর দাবি- ‘এসবই মিথ্যা অভিযোগ, ষড়যন্ত্র’। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 02:11 PM
Updated : 21 July 2014, 03:37 PM

শেখ মো. আবদুর রহমান নামের ওই দূতাবাসকর্মী রোববার সকালে দেশে ফিরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এ দাবি করেন।

কয়েকটি সংবাদপত্রে ‘আজিজুর রহমান’ হিসাবে উল্লেখ করে তার বরাতে রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজম বিরুদ্ধে নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে দূতাবাসের কাউন্সিলর এ টি এম মনিমুল হক বলছেন, নিজে বা অন্যকে বাঁচানোর জন্যে আবদুর রহমান এখন এমন দাবি করে থাকতে পারেন।

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসে শেখ আবদুর রহমান ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পাশাপাশি মালির দায়িত্বও পালন করতেন। বেতন পেতেন ৬২৫ ডলার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে এসে আবদুর রহমান বলেন, লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের দুই কর্মীর ‘প্ররোচনায়’ তিনি ‘মিথ্যা’ বক্তব্যসম্বলিত ছুটির আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনপত্রে রাষ্ট্রদূত ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন।

এ এফ এম গাউসুল আজম

বৈরুতে দূতাবাসের কার্যক্রম ‘ঠিকভাবে’ পরিচালনা না করায় রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজমকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, গাউসুল আজমকে লেবাননের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বভার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের হাতে অর্পণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

‘স্বার্থরক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে’

আবদুর রহমান পুরো ঘটনার আদ্যপান্ত বর্ণনা করে বলেন, নিজেদের স্বার্থরক্ষায় দূতাবাসের দুই কর্মী তাকে ‘ব্যবহার’ করেছেন।

আবদুর রহমান বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে আসার জন্য আমার মন চাচ্ছিল। অন্তত ঈদটা যেন দেশে এসে করতে পারি। আমি কখনো পরিবার ছাড়া ঈদ করিনি। এজন্য দেশে আসার উৎসাহটা বেশি ছিল। আর সে সুযোগটি কাজে লাগায় দূতাবাস স্টাফ সোহাগ হাসান দালাল এবং কাউন্সিলর এটিএম মনিমুল হক। সোহাগই আমাকে দ্রুত ছুটি পাওয়ার জন্য দূতাবাসে নানান সমস্যার কথা জানিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেয়।

“ওই আবেদনপত্রে সে লিখতে বলে, যেহেতু আমি ম্যাডামের বাসায়ও কাজ করি তাই খাবারের সমস্যা ও আমার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে- এমন কথা যেন লিখে দিই। আর এর সুযোগ নিয়েছিলেন কাউন্সিলর। তারা আসলে নিজেদের স্বার্থেই আমাকে ব্যবহার করেছে, যা আমি পরে বুঝতে পারি।”

নির্যাতনের ‘খবর’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  “গত ১৭ জুলাই আমি স্যারের রুমে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই গণমাধ্যমের লোকজন উপস্থিত হয়। তখন আমি অ্যাম্বাসেডর স্যারের সঙ্গে কথা বলছিলাম, কারণ আমার বেতনের টাকা তার কাজে জমা রাখি।

“ওই সময় অ্যাম্বাসেডরের উপর হামলার চেষ্টাও করা হয়। পরে গণমাধ্যমের লোকজন আমার কাছে জানতে চায় আটকে রাখা হয়েছে কি না। আমি উত্তর দিই- না, আমি আমার বেতন নিয়ে কথা বলছিলাম। আমার কাছে তারা নির্যাতন করা হয় কি না তাও জানতে চায়। তবে আমি তা অস্বীকার করি।”

“তবে ছুটির আবেদনে উল্লেখ করা বক্তব্য অনুযায়ী কথা না বলায় কাউন্সিলর আমার উপর চড়াও হন। সেখানেই কাউন্সিলরের লোকজনই আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে আরবিতে অনুবাদ করে প্রচার করেন।”

পরে তিন দিনের মধ্যে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান আবদুর রহমান।

“এই তিন দিন কোষাধ্যক্ষ আবদুর রহমানের জিম্মায় আমাকে দেয়া হলে সেখান থেকে আমাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় আমাকে আবদুর রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি আমাকে ওই বাসায় নেয়ার পথেও হামলার চেষ্টা হয়েছে।”

নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরদিন সেখান থেকে তাকে নিয়ে রাষ্ট্রদূতের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

“পরের দুই দিন আমি সেখানেই ছিলাম। ওই বাসা থেকে সবার অগোচরে রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।”

আবদুর রহমানের দাবি, কাউন্সিলর লেবাননে দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগে নারী পাচারের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার কথা তিনি শুনেছেন। লাশের টাকাও আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।

কাউন্সিলরের কথিত ‘নারী পাচার’ বা ‘অর্থ আত্মসাতের’ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করায় রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন আবদুর রহমান।

“কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এই ষড়যন্ত্র করা হয়ে থাকতে পারে, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে আমাকে। আর ওই কারণে কাউন্সিলর অ্যাম্বাসেডর স্যারের উপর রাগান্বিত হয়েছেন।”

তবে দেশে ফেরার আগেই নয় মাসের টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান শেখ আবদুর রহমান।

তিনি বলছেন, “লেবানন গণমাধ্যমে আমাকে দেখানো হলেও আমার কথা প্রচার করা হয়নি। আমার কথার ভুল অনুবাদ করে প্রচার করা হয়েছে।”

কথার শেষে শেখ আবদুর রহমান নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ আমাকে নিরাপত্তা দিন।”

২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তিনি লেবানন পৌঁছে নভেম্বরের ১ তারিখ কাজে যোগ দেন। দেশে ফেরেন ২০ ‍জুলাই সকালে। 

সব বানোয়াট: কাউন্সিলর

আবদুর রহমানের দাবিকে ‘বানোয়াট’ ও মিথ্যা’ বলে অস্বীকার করেন কাউন্সিলর মনিমুল হক।

দূতাবাস কর্মী আবদুর রহমানের দু’ধরনের বক্তব্য নিশ্চিত করতে দূতাবাসে দেয়া দরখাস্তের কপিও সরবরাহ করেন তিনি।

এখন আবদুর রহমান ‘বানানো কথা’ বলছেন বলে দাবি করেন মনিমুল।

কাউন্সিলর প্রশ্ন রাখেন, “যেদিন রহমান বের হয়ে এসেছে সেদিন তার চাচা ও বোন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিজি এডমিন সাহেবকে যেসব কথা বলেছেন তার কার্যকারিতা কী তাহলে? সব কিছু যদি ঠিক থাকবে তবে রাষ্ট্রদূতের বাসা থেকে বের হয়ে আসল কেন? কেউ যদি প্ররোচনা দিয়েই থাকে তার কোনো [ফোন বা অন্যভাবে যোগাযোগের] প্রমাণ দিতে পারবে?”

“ওর যদি কোথাও কোনো সমস্যা না থাকতো তবে অ্যাম্বেসেডরের কক্ষে তাকে কেন ৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হল? সব কিছু জিজ্ঞেস করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।”

চাকরি না করার বিষয়ে ২০ জুন এবং এর দু’সপ্তাহ পরে রাষ্ট্রদূতের বাসায় বন্দিজীবন থেকে মুক্তি চেয়ে লেবাননের বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলরের কাছে আবেদনও জানান রহমান।

নিজেকে ‘গণমাধ্যমের লোক’ উল্লেখ করে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মনিমুল বলেন, ‘ডিপ্লোমেটিক করসপন্ডেন্টদের’ সঙ্গে তার ভালো জানাশোনা রয়েছে। সব কিছু সঠিকভাবে উপস্থাপনেরই চেষ্টা করছেন তিনি।