এইচআরডব্লিউর ‘নাক গলানো’ অপছন্দ করছে সরকার

র‌্যাব ভেঙে দেয়ার সুপারিশ জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত আচরণ করছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 11:22 AM
Updated : 21 July 2014, 02:41 PM

তা যে সরকার পছন্দ করছে না, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে গঠিত বিশেষ বাহিনী র‌্যাবকে ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে দাবি করে এই বাহিনীকে ভেঙে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছে এইচআরডব্লিউ, যা রোববার তারা জানিয়েছে।

সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ওঠে এবং তাদের এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হয়।

বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি আমু সাংবাদিকদের বলেন, “এটা দেশীয় বিষয় (র‌্যাব ভাঙা), এটা তাদের বিষয় নয়।

“তাদের (এইচআরডব্লিউ) চিঠির ওপর ভিত্তি করে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নেব।”

নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকাণ্ডে র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করার দাবি তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যিনি র‌্যাব গঠনের সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

তার দাবির প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন, চট করে র‌্যাব বন্ধ করে দেয়া সম্ভবপর নয়।

র‌্যাব ভেঙে দেয়ার দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৮০০ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এই বাহিনী।

এইচআরডব্লিউ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার র‌্যাব সংস্কারের মধ্য দিয়ে এ বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে এলেও তা পূরণে ‘পুরোপুরি ব্যর্থ’হয়েছে।

“র‌্যাবকে এখন আর সংস্কার করে চালানো সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আইনের ঊর্ধ্বে থেকে কোনো ধরনের জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করে র‌্যাব পরিচালনার একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে। এই অবস্থায় এ বাহিনীকে অবশ্যই বিলুপ্ত করতে হবে, যাতে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হয়।”

আমু জানান, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন এবং ফেনীর একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘যথেষ্ট’ অগ্রগতি হয়েছে। তবে কমিটি তা আরো ত্বরান্বিত করতে বলেছে।

ঢাকার মিরপুরে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) ক্যাম্পে হতাহতের মতো ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

কমিটির অন্যান্য আলোচনা

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সীমান্তে মাদক চোরাচালানের বিষয়ে আরো সর্তকতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আমু সাংবাদিকদের বলেন, ডিজেল পাচার ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে আরো কড়াকড়ি অবলম্বন করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ফরমালিনের অপপ্রয়োগ বন্ধে ঢাকার পাশাপাশি প্রতি জেলায় অভিযান চালানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কারাগারগুলোতে অনেক দিন ধরে যেসব কর্মকর্তা এক স্থানে রয়েওছেন, অনিয়ম এড়াতে তাদের বদলি করতে বলেছে মন্ত্রিসভা কমিটি।

ঈদের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।

ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আমু বলেন, “নির্বাচনের আগে বিএনপি যেভাবে আন্দোলন করেছিল আমাদের ধারণা তারা সেইভাবে আর আন্দোলন করতে পারবে না।

“যদি আমাদের মনে হয়, তারা ওই রকম আন্দোলন করতে পারে, তবে জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব কী করতে হবে।”

তবে আইন লঙ্ঘনের যে কোনো চেষ্টা সরকার কঠোরভাবে দমন করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগ নেতা আমু।

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।