ধর্মঘটে অচল বরিশাল-ঢাকা রুট

ঢাকা-বরিশাল রুটে পরিবহন মালিকদের ডাকা বাস ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 05:27 AM
Updated : 21 July 2014, 05:27 AM

একটি দুর্ঘটনার জন্য অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে- এমন দাবি করে এর প্রতিবাদে সোমবার ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করে তারা।

গত ১১ জুলাই বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসচাপায় ১২ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে ১৯ জুলাই সমঝোতার মাধ্যমে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৬০ হাজার এবং আহতদের ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের জন্য সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের চেয়ে এই অঙ্ক অনেক বেশি ও ‘অন্যায্য’ দাবি করে রোববার ঢাকার গাবতলীতে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এক জরুরি সভা ডেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়।

ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নও এই ধর্মঘটে সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-মাদারীপুর রুটেও ধর্মঘটের ডাক এসেছে।

এদিকে ঈদের আগে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া রোববার রাতে হঠাৎ করে ডাকা বাস ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

সোমবার ভোর রাত থেকে টানা বৃষ্টি এবং সকালে বাস কাউন্টারে গিয়ে ধর্মঘটের খবরে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

ঢাকার সাভারের বাসিন্দা রুস্তম জমাদ্দার ব্যবসায়িক কাজে বরিশালে এসেছিলেন। ফিরে যাওয়ার জন্য রোববার সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ভোরে এসে শুনেন বাস যাবে না। মালিকদের ধর্মঘট চলছে।

ক্ষুব্ধ রুস্তম জমাদ্দার বলেন, "জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় ফিরতে হবে। সোমবারের মধ্যে ঢাকা যেতে না পারলে বড় ধরনের ব্যবসায়িক লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।"

বরিশাল নগরীর কালু শাহ্ এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ জানান, রাজধানীতে সোমবার রাতে ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে যোগ দিতে পরিবার নিয়ে সকাল ৮টার গাড়িতে ঢাকায় যাওয়ার কথা তার। তিনিও আগের দিন টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন।

ধর্মঘটের কারণে বাস না ছাড়ায় অন্য উপায়ে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু সেক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের যাওয়া হচ্ছে না বিয়েতে।

দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের বিষয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক আবু তালেব কচি দাবি করেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকার নির্ধারিত ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে ৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি আছে মালিকপক্ষ।

তবে এই ধর্মঘটের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন।

অন্যদিকে ঈদের এক সপ্তাহ আগে এই ধর্মঘট ডাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, যিনি ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে ছিলেন।

ধর্মঘট আহ্বানের খবর শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তালুকদার ইউনুস বলেন, “তারা ১২ জন মানুষ মারলো, আবার এখন উল্টো তারা মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করবে, এটা অন্যায়।”

ক্ষতিপূরণের অর্থের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাসের চাপায় যে ১২ জন মারা গেছে তারা কেউই বাসের যাত্রী ছিলেন না। তাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। তাই মানবিক কারণেই হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।”