কৃষিকাজ ফেলনা নয়: প্রধানমন্ত্রী

খাদ্যের জন্য আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কৃষিকাজে আগ্রহী করে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2014, 10:48 AM
Updated : 20 July 2014, 11:07 AM

কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং এই ক্ষেত্রে বহুমাত্রিকতার জন্য গবেষণা এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী রোববার কৃষি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “কৃষির প্রতি অনীহা দূর করতে হবে। কৃষকের ছেলে এখন আর মাঠে যেতে চায় না।”

বাংলাদেশে এক সময় উৎপাদিত ভোজ্য তেলের ব্যবহারের কথা তুলে ধরে সেদিন আবার ফিরিয়ে আনতে কৃষি গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

“আগে তিলের তেল, সরষের তেল, বাদামের তেল ব্যবহার হত। কেন যে এই তেল বাদ দিয়ে বাইরে থেকে আনা সয়াবিন তেল খাই? আমাদের যেন ভোজ্য তেল আর বাইরে থেকে আনতে না হয়।”

কৃষিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র কাজ’ আখ্যায়িত করে তিনি কৃষির গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট গবেষক ও কর্মকর্তাদের অবদানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, খাদ্য আমদানির অর্থ বেঁচে যাওয়ায় তা এখন অন্য কাজে লাগানো যাচ্ছে।

খাদ্য ঘাটতি থাকলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায়- বিএনপি আমলের অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি দেশকে লুলা করে রাখতে চায়। “আমরা কি ভিক্ষুকের জাতি হয়ে থাকব?”

স্বাধীনতার পর কৃষি খাতের উন্নয়নকে বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন,তার সরকারও সেই ধারা এগিয়ে নিচ্ছে।

“কৃষি পেশায় মেধাবী গ্রাজুয়েটরা যেন আকৃষ্ট হয়, সে জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) কৃষি গ্রাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করেন। এ ছিল এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত।”

কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে তাতে সরকারি সহায়তার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষি উপকরণে সহায়তার পাশাপাশি সেচ ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কথাও বলেন তিনি।

কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দীপনা ও উৎসাহ বাড়াতে চাকরির অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো এবং গত অর্থবছরে ১ হাজার ২২২ জন কৃষিবিজ্ঞানীকে প্রণোদনা হিসেবে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দেয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

কৃষি গবেষণার অর্জনের বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি তো মনে করি, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্ট্রবেরি এখন বাংলাদেশে হচ্ছে। গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়াতেই এটা হয়েছে। সব ধরনের সবজি এখন পাওয়া যাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় ৮১টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এ সকল প্রকল্পে ১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। চলতি বাজেটে কৃষি খাতে ১২ হাজার ২৮৮ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কৃষি পণ্যের বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে আরো কার্যকর ভূমিকা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৪টি জেলার সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করায় কৃষি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তা যথাসময়ে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রতিকূলতা পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম ফসল আবাদের লক্ষ্যে বিএডিসি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার চর এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৪৫ একর জায়গার ওপর একটি বৃহত্তম নতুন বীজ বর্ধন খামার স্থাপন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠা চরাঞ্চলকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এই এলাকার কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বর্গাচাষীদেরকে কৃষিঋণ বিতরণ, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ, হাওর অঞ্চলে বোরো চাষীদের ও ভূট্টা চাষের জন্য বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান, দেশে প্রথমবারের মত ১ কোটি ৪৫ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণের কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষি উপকরণ কার্ড ২ কোটি ৩০ লাখে উন্নীত করার কাজ চলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনসহ কৃষিখাতের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিকে টেকসই করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ‘জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৩’ প্রণয়ণের কথাও বলেন সরকার প্রধান।

তিনি জানান, জাতীয় কৃষি নীতির আলোকে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৪’ এবং ‘জাতীয় ক্ষুদ্রসেচ নীতি ২০১৪’ প্রণয়নের কাজ চলছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। কৃষি সচিব নাজমুল ইসলাম ছাড়াও ওই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরীও এসময় উপস্থিত ছিলেন।