রাষ্ট্রদূত পদের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত বার্নিকাট বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটির সামনে বাংলাদেশের বিষয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, “গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জরুরি ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার যাতে আরো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই অবিলম্বে নতুন নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে, যাতে সমঝোতার ভিত্তিতে সব দল ভোটে অংশ নিতে পরে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত মে মাসে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে বার্নিকাটকে মনোনয়ন দেন। এই দায়িত্বে তিনি বর্তমান রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
পেশাদার কূটনীতিক বার্নিকাট বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিসট্যন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছেন। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এই নারী ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গিনি বিসাউ ও সেনেগালে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে বার্বাডোজ ও মালাবিতে উপরাষ্ট্রদূতের পদেও ছিলেন তিনি।
২৭ বছরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞাতসম্পন্ন বার্নিকাট দক্ষিণ এশিয়াতেও কাজ করেছেন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোতে ছিলেন তিনি। এ সময় তার আওতায় ছিল ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নয়াদিল্লি মিশনে। তার আগে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নেপাল ডেস্ক অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
সিনেট কমিটিকে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তিনি গত তিন দশকে বিশ্বের পাঁচটি অঞ্চলের আটটি দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন।
“আমার দুই ছেলে সুমিত নিকোলস ও সুনীল ক্রিস্টোফার ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে এবং তাদের বাবা অলিভিয়ের বার্নিকাটের মতোই পুরো বিশ্বকে নিজেদের ক্লাসরুম বলে মনে করে।”
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘এক গুরুত্বপূর্ণ’ সময়ে ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ রাষ্ট্র বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হওয়ায় নিজেকে সম্মানিত বোধ করছেন বলেও উল্লেখ করেন বার্নিকাট।
রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পেলে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, মানবপাচার রোধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকি মোকাবেলা, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা, মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসারে কাজ করার আগ্রহের কথা সিনেট কমিটিকে জানান এই কূটনীতিক।
তিনি বলেন, “আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি বাংলাদেশে জবাবদিহিতার প্রসার এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে শ্রম দেব।”
বার্নিকাট তার বক্তব্যে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা ভারত ও সদ্য উন্মুক্ত হতে চলা বার্মার মাঝে কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্য সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের অবস্থানে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি সরকার, সুশীল সমাজ ও সকল শ্রেণির বাংলাদেশির সঙ্গে কাজ করব, যাতে সবচেয়ে বিস্তৃত ও ন্যায়সঙ্গত অংশ্রগ্রহণকে উৎসাহিত করে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।”