সংসদে ডিএনএ বিল

অপরাধী চিহ্নিত, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নিরূপণ কিংবা মৃতদেহ শনাক্ত করার মতো কাজে ডিএনএ পরীক্ষা ও সংরক্ষণে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2014, 06:55 AM
Updated : 23 June 2014, 08:24 AM

সোমবার জাতীয় সংসদে ‘ডিঅক্সি রাইবো নিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) বিল-২০১৪’ উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ।

বিলটি পরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

গত বছরে ২ সেপ্টেম্বর বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।

বিলে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি স্থাপন ও জাতীয় ডাটাবেইজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তব করা হয়েছে।

এতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে ১৮ সদস্যের একটি ফরেনিসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষেদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের রাখার কথা বলা হয়েছে।

বিলটি পাস হলে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা সরকারের অনুমোদন ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা বা সংরক্ষণ করতে পারবে না। এ আইন ভাঙলে ৫ বছর পর্যন্ত জেল এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

ডিএনএ নমুনা ধ্বংস, পরিবর্তন, দূষিত বা জাল করা হলে; কারো দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা না গেলে বা নমুনা নষ্ট হলেও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

বিলে বলা হয়েছে, “তদন্তের প্রয়োজনে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কেউ অসম্মতি জানালে পুলিশ আদালতে যেতে পারবে।”

তবে কমপক্ষে দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতি এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ছাড়া কোনো ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা যাবে না।

প্রতিটি জীবকোষের নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম, যা গঠিত হয় ডিএনএ, প্রোটিন ও রাইবোনিউক্লিক এসিড (আরএনএ) দিয়ে। এর মধ্যে ডিএনএকে বলা হয় বংশগতির বাহক। অর্থাৎ জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে তা এই ডিএনএর জিন বিন্যাসের ওপরই নির্ভর করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের সময় সাধারণত ১৬টি নির্দেশক (এসটিআর মার্কার) ব্যবহার করা হয়।

কোনো ব্যক্তির ডিএনএর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে প্রতিটি নির্দেশকের বিপরীতে দুটি করে পৃথক সংখ্যা পাওয়া যায়, যার প্রতিটি ওই ব্যক্তির এক একটি বৈশিষ্টের পরিচয় বহন করে। ১৬টি নির্দেশকের ৩২টি সংখ্যা মিলেই তৈরি হয় ওই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা।

প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এই রূপরেখা হয় আলাদা। ফলে কোনো অপরাধ সংঘটনের স্থানে নমুনা হিসেবে পাওয়া রক্ত, ত্বক, দেহের অংশ এমনকি চুল থেকেও ডিএনএ পরীক্ষা করে অপরাধী সনাক্ত করা সম্ভব হয়।

আবার দুই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা, অর্থাৎ একজনের ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া ৩২টি সংখ্যার সঙ্গে অন্যজনের সংখ্যা মিলিয়ে দেখলেই বাবা-মা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে দিতে পারেন বিজ্ঞানীরা। 

প্রস্তাবিত আইনে, জাতীয় ডিএনএ ডাটাবেইজে চারটি ইনডেক্স প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো- অপরাধস্থল ইনডেক্স, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ইনডেক্স, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ইনডেক্স এবং সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত অন্য কোনো ইনডেক্স।

প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান প্রদানের বিধানেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে বিলে।