নগর বর্জ্যে দূষিত বারনই নদী

রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্যমিশ্রিত পানিতে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে বারনই নদী। পবা উপজেলার ঝুজকাই ও দুয়ারী খাল হয়ে প্রতিদিন নগরীর বিপুল পরিমাণ বর্জ্যমিশ্রিত পানি এ নদীতে পড়ছে।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2014, 11:37 AM
Updated : 6 June 2014, 11:37 AM

পরিবেশবিদরা বলেন, নগরীর বর্জ্যমিশ্রিত ড্রেনের পানি পরিশোধনের জন্য শোধনাগার স্থাপন করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে আলোচনা করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে এ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।

অধ্যাপক সাত্তারের মতে, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাও আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই পৃথিবীর প্রায় লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ও বৃহৎ দ্বীপমালাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৬০ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

তাই জাতিসংঘ ২০১৪ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব স্মল আইল্যান্ড ডেভলপিং স্টেট’ ঘোষণা করেছে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩০টির বেশি দ্বীপ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯টি জেলার আয়তন প্রায় ৪৭,২১০ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের সমগ্র আয়তনের প্রায় ৩২ শতাংশ। উপকূলীয় এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের বাস।

সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এসব অঞ্চল প্লাবিত হলে মানুষ তার জীবিকা হারাবে। এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নিম্নচাপ, সাইক্লোনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকৃতি আরো খামখেয়ালী ও বেপরোয়া আচরণ করতে পারে।

তাই আমাদের সবুজ অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হতে হবে, উন্নততর জীবনমানের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য আরো সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবুল বাসার, রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কেমিস্ট মিজানুর রহমান, পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক তন্ময় সন্ন্যালসহ  ব্র্যাক, এসিডি, কারিতাস, বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তন্ময় সন্ন্যাল বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। নানা উদ্দেশ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে আবাস গড়ছে নগরীতে। সেইসঙ্গে বাড়ছে শিল্পকারখানা, বাড়ছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

এসব উৎস থেকে প্রতিদিনই নির্গত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। বর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনে। তার মাধ্যমে চলে যাচ্ছে বারনই নদীতে। এখানে পরিবেশ আইনের কোনো তোয়াক্কা করছে না কেউ।

এসব বর্জ্য মিশ্রিত পানি শোধনের ব্যবস্থা না করা হলে কয়েকবছরের মধ্যে বারনই নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক আবুল বাসার জানান, দূষিত পানি ব্যবহারে সরাসরি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে দূষিত এ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি থাকলে তা শাকসবজির মধ্যদিয়ে মানুষের শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ড্রেনের পানিতে সরাসরি মেডিকেল-ক্লিনিকগুলোর বর্জ্য গেলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে। আর এজন্য মেডিকেল-ক্লিনিকগুলোর বর্জ্য অন্ততঃ ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ধরে রেখে প্রাথমিক শোধন করে তারপর ড্রেনে ফেলা প্রয়োজন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, রাজশাহী বিসিকের কারখানা মালিকদের তরল বর্জ্য শোধনের জন্য শোধণাগার স্থাপনের জন্য বার বার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা আর্থিক সংকটের অজুহাতে এটি করছেন না।

তিনি নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা এবং পানি দূষণ রোধে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে প্রাথমিক শোধনাগার স্থাপনে উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করেন।