মিয়ানমার থেকে এল বিজিবি সদস্যের লাশ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দুদিন আগে গোলাগুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমানের লাশ ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার।

নিজস্ব প্রতিবেদক কুমিল্লা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2014, 09:53 AM
Updated : 31 May 2014, 09:53 AM

ওই গোলাগুলির পর সীমান্তে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। আরেক দফা গোলাগুলির পর ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবও করে সরকার।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে মিও মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকার পর লাশ হস্তান্তরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে বিকাল পর্যন্ত লাশটি ফেরত পাওয়া যাচ্ছিল না।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে পরিস্থিতি সহনীয় করতে সরকারের যা যা করার দরকার তা করা হচ্ছে।

বিজিবির এক সদস্যের মৃত্যুর কথা জানিয়ে তার লাশ ফেরত আনার প্রক্রিয়ার কথাও বলেন তিনি।

এরপর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সন্ধ্যায় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের শান্তিরক্ষী বাহিনী বিজিপি।

“কালকে রাতে তারা (মিয়ানমার পুলিশ) বলে যে আজকে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তারা ৫২ নম্বর বর্ডার পিলারের কাছে ডেড বডি নিয়ে আসবে। একজন মেজরের নেতৃত্বে আমাদের ১০ জন লোক সেখানে যায়। জিরো লাইন পার হলে করলে তারা (মিয়ারমার পুলিশ) সেখানে নিয়ে যায়।“

“সেখানে নিয়ে গিয়ে তারা আমাদের ডেডবডি দেখায়। ডেডবডি আইডেন্টিফাই হয় যে এটা আমাদের নায়েক মিজানের। অন্যান্য ফরমালিটি শেষ করে আমরা ডেডবডি ফিরিয়ে আনি।”

তবে মিজানের সঙ্গে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেরত পাওয়া যায়নি বলে জানান বিজিবি প্রধান। 

“তার (মিজান) সাথে যে একটি এসএমজি ছিল, ১২০ রাউন্ড এ্যামুনেশন ছিল, এটির বিষয়ে আমরা তাদেরকে জানাই। তারা বলে যে এ মুহূর্তে সেটি নাই, তারা তাদের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

এবিষয়ে আগামী ৩ জুন দুই দেশের বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হবে বলে জানান বিজিবি প্রধান।

গত বুধবার রাতে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিজিবি সদস্যরা টহল দেয়ার সময় ওপার থেকে গুলিবর্ষণ হয়। তারপর থেকে মিজানকে পাওয়া যাচ্ছিল না।

বিজিবিও নিশ্চিত ছিল না যে মিজানের কী হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে উদ্ধৃত করে সেদেশের সংবাদপত্র ইরাবতী জানায়, বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছেন।

বুধবার রাতে গোলাগুলির পর বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে প্রথম তলব করার পর বিজিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের কাছে একটি লাশ রয়েছে।

বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, “কিন্তু লাশটি কার, তা বলেনি তারা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা তা দেখানোর আহ্বান জানাই, কেননা আমাদের একজন সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন।”

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওই লাশ দেখানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না করে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীরা গুলি ছুড়লে বিজিবি সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালালে আবার উত্তেজনা দেখা দেয়।

বিজিবির কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ফরিদ হাসান জানান, ৩ ঘণ্টাব্যাপী পতাকা বৈঠকের পর বিজিপি মিজানের লাশ হস্তান্তর করে।

সীমান্তের পাইনছড়ি এলাকার ৫২ নম্বর পিলারের কাছে এই পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয় বাহিনীর প্রতিনিধিরা বেসামরিক পোশাকে ছিলেন।

ফরিদ হাসান বলেন, মিজানের লাশ ৩১ ব্যাটেলিয়ানের সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হবে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার বিশেষ বাহনে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে পাঠানো হবে।

বাবা শহীদ মুক্তিযুদ্ধে, ছেলের মৃত্যু সীমান্ত রক্ষায়

নিহত নায়েক মিজানুর রহমানের বাবা ছিলেন ল্যান্স কর্পোরাল আবদুল হাফিজ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।

শনিবার লাশ ফেরত এলেও আগের দিনই মিজানের পরিবার  মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তাদের স্বজন আর নেই।

শুক্রবার বিকালে মিজানের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভৈষেরকোটের ভেলানগরে গিয়ে দেখা যায়, তার মা রাবেয়া আক্তার (৬৫), স্ত্রী শামিমা আক্তার পারুল (৩৫) ও চার মেয়েসহ স্বজনরা আহাজারি করছেন।

মিজানের লাশ আনতে নাইক্ষ্যংছড়িতে গেছেন তার শ্যালক জালাল উদ্দিন।

শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, বিজিবি লাশ গ্রহণ করেছে, কিন্তু সরকারি আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুর্গম ওই এলাকা থেকে কখন কুমিল্লার দেবিদ্বারে লাশ আনা যাবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় বড়কামতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশীদ জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মিজানের বাবা আবদুল হাফিজ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত অবস্থায় যুদ্ধে শহীদ হন।

মিজান ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগ দেন। দুই মাস আগে লালমনিরহাট থেকে তাকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বদলি করা হয়।

তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের পানছড়ির বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন।