ঢাকার লক্ষ্য বিদ্যুৎ, পানি, যোগাযোগ

ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ আলোচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি তুলতে যাচ্ছেন।

নয়াদিল্লি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2014, 06:26 AM
Updated : 27 May 2014, 07:32 AM

অনেকদিন ধরেই ভারতের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হওয়া আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টি নিয়েও মঙ্গলবার বিকালে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক করিম আভাস দিয়েছেন।

সোমবার ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে নির্ধারিত বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে শিরীন শারমিন স্পষ্ট কিছু বলেননি।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে আমরা আরো জোরদার করতে চাই। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করতে চাই।”

মোদির সঙ্গে স্পিকারের বৈঠকটিকে সরকারের পক্ষ থেকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলা হলেও আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়ন, আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের পাশাপাশি অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টিও স্পিকার গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন বলে ইঙ্গিত দেন হাইকমিশনার তারিক করিম।

তিনি বলেন, “নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা ভারতের নতুন সরকারকে ইতিবাচক ধারণা দেব।”

বাংলাদেশ আঞ্চলিক দুটি সহযোগিতা সংস্থা- বিসিআইএম এবং বিমসটেকের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আগ্রহী এবং এ বিষয়টিও ভারতের নতুন সরকারের গোচরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক বাংলাদেশের আরেক কূটনীতিক।  

ভারত অনেকদিন ধরেই ঢাকায় বিমসটেকের প্রধান কার্যালয় স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কলকাতা থেকে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং পর্যন্ত একটি অথনৈতিক করিডোর স্থাপনের লক্ষ্যে বিসিআইএমের কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে চায় ভারত।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এতে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সঙ্গে শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা স্থাপনে অনেকদিন ধরেই কাজ করছে দুই দেশ। ত্রিপুরার ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানির কেন্দ্র থেকে এই সরবরাহ লাইনে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে ভারত।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় ভারতের অংশে ৭৪ এবং বাংলাদেশ অংশে প্রায় ২৭ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৪০০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র।

এর মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছরের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।  

ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হলে এরই মধ্যে এ গ্রিডে যুক্ত ভুটান ও নেপাল থেকেও কম খরচে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে বাংলাদেশ।

বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি আঞ্চলিক চুক্তির জন্য অনেক দিন ধরেই বলে আসছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-আখাউড়া রেলপথ স্থাপনের পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। এর ফলে পরোক্ষভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গেও ভারতের কেন্দ্রের যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে গ্রহণযোগ্য একটি চুক্তি করতে সক্ষম হলে বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের মাধ্যমে এসব রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর দরজা খুলে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সব মিলিয়ে কলকাতার মৌলানা আজাদ ইন্সটিটিউটের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের সাবেক প্রধান জয়ন্ত রায় বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘দুই দেশের জন্যই সুবিধাজনক (উইন-উইন)’ বলে অভিহিত করেছেন।