কথায় কথায় রিট কাজে বাধা: প্রধানমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড নির্বাহী বিভাগের কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2014, 02:45 PM
Updated : 14 May 2014, 07:05 PM

বিভিন্ন বিষয়ে আদালতে রিট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, “কিছু লোকের অতি উৎসাহ কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা এ কাজকে ব্যাহত করে। কথায় কথায় রিট, যে কাজ আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী ও নির্বাহী বিভাগের, সেখানে সব কাজ জুডিসিয়ারি করে আমাদের তাহলে কী করণীয় থাকে?

“মনে হয় আমাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে দিচ্ছে। অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন অপরাধীদের সজাগ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।”

বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে শেখ হাসিনা এসব বলেন।

তিনি বলেন, “নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগ পালন করবে। কেউ অতি উৎসাহী হলে অসুবিধা হয়। জুডিসিয়ারি, লেজিসলেচার ও এক্সিকিউটিভ- কেউ যেন একে অপরের কাজে বাধা সৃষ্টি না করে।”

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি, দেবো না। এ সাত খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, যাবে কোথায়? খুঁজে বের করে শাস্তি দেব।

“যে-ই হত্যাকাণ্ড ঘটাবে সে যে দলেরই হোক ব্যবস্থা নেব। কে কার লোক তা দেখি না- অন্যায় যে করবে, তার বিচার হবে। কখন কী পদক্ষেপ নিতে হবে- তা ভালোভাবে জানা আছে।”

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।

গত রোববার এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সাতখুনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডারসহ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

ওই তিন কর্মকর্তা হলেন- র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা। এদের মধ্যে তারেক সাঈদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।

হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো বিশেষ আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

আইনি কোনো বাধা না থাকলেও দৃশ্যত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে পুলিশের প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে তিন দিনেও গ্রেপ্তার হননি নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে অভিযোগের মুখে থাকা র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা।

তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের মহাপরিদর্শককে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হাই কোর্ট নির্দেশ দিলেও তাদের গ্রেপ্তারে দেরি হওয়ায় আদালত অবমাননা হবে না বলে মনে করছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার তৎপর রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ঘটনা হলে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

নারায়ণগঞ্জে নিহত সাত জনের পাঁচজনই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা জড়িত। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”

এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বদলি করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত যে পদক্ষেপ নিয়েছি- কাউকে তা দাবি করতে হয়নি।”

র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি কেন?

র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি তোলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন তিনি পার্লামেন্টে নেই। হঠাৎ সোচ্চার হয়ে গেলেন, র‌্যাব বাতিল করতে হবে।

“তাদের সময়ে র‌্যাবকে দিয়ে কতগুলো রাজনৈতিক হত্যা করিয়েছে, সে হিসাব আমাদের আছে। যখন ক্ষমতায় ছিল তখন র‌্যাব ভালো। এখন র‌্যাব বাতিল করতে হবে?”

নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর থেকে র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সেনাপ্রধান হিসাবে জিয়াউর রহমানের সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়া যে কাজ করেছিল তাতে সেনাবাহিনী বাতিল হয়ে যাবে?

“পুলিশের কেউ অপরাধ করলে পুলিশ বাতিল হয়ে যাবে?”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “র‌্যাবকে কে ইমিউনিটি দিয়েছে? খালেদা জিয়া। র‌্যাব কে তৈরি করেছে? খালেদা জিয়া। র‌্যাবকে রাজনৈতিক কাজে কে ব্যবহার করেছে? খালেদা জিয়া।”

২০০২ সালে সেনা সদস্যদের দিয়ে অপারেশন ক্লিন হার্ট চালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যার অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “অপারেশন ক্লিন হার্টে হত্যাকারীদের ইমিউনিটি দিল। অপারেশন ক্লিন হার্টে যারা মানুষ হত্যা করল, তাদের পদক দিয়ে উৎসাহিত করা হল।”

বিডিআর বিদ্রোহের আগে খালেদা জিয়া তার সে সময়ের ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবন ত্যাগ করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার ছেলে ৪৮ বার লন্ডনে বসে কার সাথে ফোনে কথা বললো? সে রেকর্ড আছে।”

অপরাধীকে দলে নয়

নারায়ণগঞ্জে সাতখুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের উত্থান বিএনপি থেকে-মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রথমে বিএনপি, তারপর জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছিল সে।”

কোনো অপরাধীকে আওয়ামী লীগে না নেয়ার নির্দেশ দিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ক্ষমতায় আসলে কিছু লোক পার্মানেন্ট গভমেন্ট পার্টি হয়ে যায়। যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত- তারা যেন দলে আসতে না পারে।

“তারা দলে ঢুকে ক্ষতি করে। দলে ঢুকে জেনুইন কর্মীদের হাত-পা কেটে দিচ্ছে।”

উপস্থিত নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। কেউ যেন হাবিজাবি লোক টেনে না আনে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সমালোচনা

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় তিন র্যর‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে জন্য হাই কোর্টের আদেশের প্রক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সমালোচনা করা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত কার্যনির্বাহী সংসদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৈঠকে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর কাছে আদালতের আদেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

এসময় মতিন খসরু বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দেশে থাকলে আদালত এই ধরনের আদেশ দিতে পারতো না। মাহবুবে আলমের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন নাই।

এছাড়া সাংগঠনিক সফরের বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।