নিয়ামতপুরে মূর্তি ভেঙেছেন ‘আ. লীগ নেতা’

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও শিবমূর্তি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

নওগাঁ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2014, 02:19 PM
Updated : 12 May 2014, 02:19 PM

রোববার সন্ধ্যায় ১৮-২০টি মোটরসাইকেলসহ অর্ধশতাধিক যুবকের বাহিনী নিয়ে নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান নঈম ওই মন্দিরে হামলা চালান বলে স্থানীয়রা জানান।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, গ্রামের ওই শ্মশান আশপাশের চারটি গ্রামের হিন্দু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন শত শত বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। সেখানে ছয় মাস আগে একটি শিব মন্দির স্থাপন করা হয়। পূজা-অর্চনার পাশাপাশি প্রত্যেক সন্ধ্যায় কীর্তনও হয়ে থাকে।

রোববার সন্ধ্যায় কীর্তনের প্রস্তুতিকালে নিয়ামতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান নঈমের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক যুবক লাঠিসোটা নিয়ে মন্দিরটিতে হামলা চালায়।

এ সময় স্থানীয় দয়াল চন্দ্র শীল, দ্বিজেন চন্দ্র বর্মন ও নরেন কর্মকারকে মারপিট করলে তারা পালিয়ে যান।

এরপর হামলাকারীরা মন্দিরসহ আশপাশের বেড়া আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও মন্দিরের শিব মূর্তিসহ কীর্তনের খোল-করতাল ভাঙচুর করে।

সাবেক ইউপি সদস্য মহারাজপুর গ্রামের বসুদেব চন্দ্র বর্মন জানান, যুগ যুগ ধরে মহারাজপুর, কোচপাড়া, কুতুবপুর ও মানপুর গ্রামের হিন্দু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন জায়গাটি শ্মশান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

শ্মশানের পুকুরসহ সম্পত্তির দখল নিতে আওয়ামী লীগের এ নেতা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কোচপাড়া গ্রামের কমল চন্দ্র বর্মন, মহারাজপুর গ্রামের মটরী রানী বর্মন, জবা রানী বর্মন ও সুন্দরী রানী কর্মকার জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নঈমের এ সন্ত্রাসী হামলায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

শ্মশানটি বেদখল হয়ে গেলে মরদেহ সৎকারে আর কোনো বিকল্প স্থান নেই বলে জানান তারা।

শ্মশান শিব মন্দিরের সেবায়েত লাল বাহাদুর শীল বলেন, “আদিবাসী সম্প্রদায়ের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে এ হামলা চালানো হয়েছে।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, সরকারি এ সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে শ্মশান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মন্দির, মূর্তি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থার মধ্য রয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান নঈমের এটি ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এ ব্যাপারে নইমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নিয়ামতপুর থানার ওসি ওবাইদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এজাহার পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাজ্জাদুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ইউএনও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।