র‌্যাবের সেই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ

নারায়ণগঞ্জে সাতখুনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডারসহ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2014, 07:22 AM
Updated : 11 May 2014, 04:13 PM

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে রোববার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

পুলিশের মহাপরিদর্শককে অবিলম্বে এজন্য পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ওই তিন কর্মকর্তা হলেন- র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা। এদের মধ্যে তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।

হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো বিশেষ আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে।

গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।

লাশ উদ্ধারের আগের দিন তারেক সাঈদ মাহমুদকে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেনাবাহিনীতে পাঠানো হয়েছিল।

এরপর নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা তার জামাতাসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।

ওই অভিযোগ ওঠার পর গত ৭ মে র‌্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অকালীন ও বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনার পাশাপাশি ‍দুটি রুলও জারি করেছে আদালত। রুলে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত কার্যক্রম সম্পর্কিত আইন সংশোধন ও হালনাগাদ করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় আইনের ঘাটতি সংশোধনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।

দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদেশের পর ওই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, এর আগে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিল। সে সময় ওই তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়টা থাকলে ওই বেঞ্চই তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতো।

“আমরা নতুন করে এ বিষয়ে আদেশ দিলাম। কারণ কিছু পাওয়া না গেলেতো তাদের বরখাস্ত করা হতো না।”

আদালত বলেছে, “এর আগের স্বতঃপ্রণোদিত আদেশের সঙ্গে এই রিটেরও শুনানি হবে। সেই বেঞ্চের বিবেচনার জন্য আমরা বিষয়টি পাঠিয়ে দিলাম।”

শুনানিতে কামাল হোসেন বলেন, সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে সংবিধান নিশ্চয়তা দিয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকারই মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক।

“এ ব্যাপারেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শুধু এই ২৭ এপ্রিলের ঘটনাই নয়, এর আগেও বিনাবিচারে হত্যা, খুন ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনায় অনেকের লাশ পাওয়া গেছে। অনেকের যায় নাই।”

তিনি বলেন, হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ রুল ইস্যু করেছিল। কিন্তু সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার রক্ষায় নির্দেশনা প্রয়োজন। সংবিধানের অভিভাবক হিসাবে সুপ্রিম কোর্ট সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে।

“অতীতে এ ধরনের বিনাবিচারে হত্যা, গুম ও খুনের ঘটনার পর এগুলো আর ঘটবে না বলে আমরা নানা প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হয় নাই।

“আইনে কোনো ঘাটতি থাকলে সেগুলো উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে।”

সাধারণত বেঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে থাকেন। এই মামলায়ও ওই বেঞ্চে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার উপস্থিত ছিলেন।

পাশাপাশি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান আদালতে উপস্থিত থাকলেও তিনি পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি।

সকালে সাত খুনের ঘটনা তদন্ত  পর্যবেক্ষণে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে রিটটি করা হলেও পরে আদালতে বসেই আবেদনকারীর আইনজীবীরা রিট আবেদন সংশোধন করেন। সংশোধিত ওই রিটের আর্জিকে কিছুটা পরিবর্তন করে আদালত আদেশ দেয়।

নিহত চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র নির্বাহী সভাপতি মাহবুবুর রহমান এই রিট দায়ের করেন।